কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন শিপ্রা দেবনাথ
কক্সবাজার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের প্রামাণ্যচিত্র তৈরির সঙ্গী ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ। আজ রোববার বিকেল ৩টায় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এ সময় জেলগেটে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ভাই সৈকত দেবনাথ ও আইনজীবীরা।
শিপ্রা দেবনাথের আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা আদালত থেকে শিপ্রার জামিন মঞ্জুরের কাগজ আসার পরপর দ্রুত তা যাচাই-বাছাই করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর শিপ্রাকে নিয়ে চলে যান তাঁর ভাই সৈকত দেবনাথ।
এর আগে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহতের ঘটনার পর নীলিমা বিচ রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার হওয়া শিপ্রা দেবনাথকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন দেন আদালত। অপর সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের দুই মামলার জামিনের শুনানি শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করার আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল এ দুটি বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত।
আজ কক্সবাজার আদালতে রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. দেলোয়ার হোসেন জামিনের শুনানি শেষে শিপ্রা দেবনাথের জামিন মঞ্জুর করেন। অপর বিচারক রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে সাইদুল ইসলাম সিফাতের দুটি মামলায় জামিনের শুনানি শেষ হয়েছে।
আদালতে শিপ্রা দেবনাথের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু।
এ বিষয়ে শ্রিপ্রা দেবনাথের আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে জামিন আবেদন করি। আদালতকে জানিয়েছি, শিপ্রা দেবনাথ ঘটনার শিকার হয়েছেন। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ একটি বানোয়াট মামলা করেছে। পরে নারী বিবেচনায় মামলার প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত, তাঁকে (শিপ্রাকে) জামিন দিয়েছেন আদালত।’
অপরদিকে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশ সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা, অপরটি হত্যা মামলা। এসব মামলায় জামিনের আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।’
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যে নীলিমা বিচ রিসোর্টে ছিলেন সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে আটক করে। পরে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর শিপ্রা দেবনাথকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। আর সিফাতকে মাদকদ্রব্যসহ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাদের নিয়ে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।
সিনহা নিহতের ঘটনার বিচার চেয়ে গত বুধবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন তাঁর বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
এর আগে গত ২ আগস্ট বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ওসি প্রদীপকে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
এরপর গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে বাদীপক্ষ তাদের আটক ও পরে রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলালকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। আর বাকি চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।