কুড়িগ্রামে বানভাসীদের কষ্ট বেড়েছে দ্বিগুণ
কুড়িগ্রামে প্রধান দুটি নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি সামান্য কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকেই এগুচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক চরাঞ্চলের প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বানভাসী মানুষজন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে গবাদি পশু নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছে।
এই দীর্ঘ সময় পানিবন্দি থাকা দুর্গম চরাঞ্চলের পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পরিবার পরিজন, গৃহপালিত পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এতে করে উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা।
ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, বালাডোবার চর ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর, চর যাত্রাপুরসহ কয়েকটি চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মূলত ব্রহ্মপুত্রের পানি কমে যাওয়ার আশায় এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে নৌকায় এবং ঘরের ভিতরে গলা পানিতে মাচান বেঁধে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু পানি নেমে যাওয়ার কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না।
জেলার বন্যাকবলিত দুর্গম এলাকার চর ও দ্বীপ চরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার বেশির ভাগ চরের বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। পরিবার পরিজন, পশুপাখি উঁচুতে রেখে এসে দুই বা তিনজন নৌকায় করে এসে ঘর বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহ আগে যে চরগুলোতে দুর্গত মানুষজন নৌকায় ও ঘরের ভিতর কষ্ট করে বসবাস করে আসছিল। সেখানকার বেশিরভাগ ঘর বাড়ি এখন ফাঁকা পড়ে আছে।
ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর গ্রামের ইয়াছিন আলী জানান, নদের অববাহিকায় তারা ১০টি পরিবার বসবাস করছিল। তারা কষ্ট করেই এত দিন বাড়িতে ছিল। কিন্তু এই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পানি নামবে নামবে করে নামছে না। পানিতে ছোট ছোট বাচ্চা, গরু, ছাগল নিয়ে আর কত দিন থাকা যায়? তাই পার্শ্ববর্তী উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে তারা। এখন পালা করে নৌকায় বসে থেকে দিন রাত ঘর বাড়ি পাহারা দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে পানি স্রোতে ঘর বাড়ি ভেসে যায় কি না। আবার কোনো কিছু চুরি হয় কি না সেই ভয়ে।
এ ব্যাপারে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারমম্যান বেলাল হোসেন বন্যাকবলিত মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে জানান, তাদের ইউনিয়নে যে পরিমাণ বন্যাকবলিত পরিবারের সংখ্যা রয়েছে এবং যে পরিমান ত্রাণের চাল বরাদ্দ পেয়েছে- তা দিয়ে অর্ধেক পরিবারকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, নয় লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য দুই লাখ, গো-খাদ্যের জন্য চার লাখ ও আট হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তাদের কাছে আরো ত্রাণের চাল ও টাকা মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলোও বিতরণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টি মিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬০ এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪৫ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।