ক্রসফায়ার : ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা
চাহিদামতো ঘুষ দেওয়ার পরও এক ব্যক্তিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ এনে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়েরের পর বিচারক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ইনসাফুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আদালত মামলাটি সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলাটি করেছেন উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার গুল চেহের। তিনি অভিযোগ করেছেন, পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও তাঁর ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে। বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মামলার দুই নম্বর আসামি। ২৮ আসামির ২৭ জনই পুলিশের সদস্য। অন্যজন হলেন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নূরুল আমিন।
মামলার বরাত দিয়ে আইনজীবী জানান, গত ৪ জুলাই বাদী গুল চেহেরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও মো. জাহেদ হোসেনকে পুলিশ বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দিতে পুলিশ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না দিলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে ওই দিন তিন লাখ সরাসরি হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানের হাতে দেন বাদী গুল চেহের। বাকি দুই লাখ টাকা পরের দিন মশিউর রহমানের কথামতো তার পাঠানো বাহক ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নুরুল আমিনকে দেন। পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার পর জাহেদ হোসেনকে গত ৬ জুলাই একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। টাকা দেওয়ার পরও সাদ্দাম হোসেনকে ছাড়া হয়নি।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, গত ৭ জুলাই গভীর রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বোনিয়া বড়ছড়া এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন ও আব্দুল জলিল গুরুতর আহত হয় বলে পুলিশ দাবি করে। এ ঘটনায় তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সাদ্দামকে মারার কিছুদিন আগে তাঁর বাবা সুলতান আহমদ ওরফে বাদশাও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন। বাদী আরো বলেন, কিছুদিনের ব্যবধানে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিয়মিত হুমকি দিয়েছে পুলিশ। তাই মামলার আবেদন করতে বিলম্ব হয়েছে।