কয়লাখনির জলাশয়ের মাছ শিকারের অভিযোগ

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পতিত জলাশয়ে চলছে মাছ শিকারের মহা উৎসব। সরকারি এ জলাশয়ে অবৈধভাবে মাছ ধরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও সভাপতি নুরুজ্জামান অভিযোগ করে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এ আর বি ইটভাটা মালিক রেজওয়ানুল হক ভাড়াটিয়া জেলেদের দিয়ে অবাধে ওই জলাশয়ের মাছ শিকার করছেন। জলাশয়টির মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করার অনুমতি রয়েছে একমাত্র সরকারি কার্ডধারী মৎস্যজীবীদের।
মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা আরও জানান, আগামী তিন মাসের মধ্যে কেউ কোনো মাছ শিকার করতে পারবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ওই ভাটামালিক সে বিষয়ে তোয়াক্কাই করছেন না। বেড় জাল দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টন মা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত ওই ইটভাটা মালিক চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মাছ শিকার করেছেন।
তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে বেআইনি এই মাছ শিকার বন্ধ করা না হলে জলাশয়টির মাছের উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। ফলে এলাকার মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বনটুকু বন্ধ হয়ে যাবে।
বৌদ্ধনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ আর বি ভাটা মালিক রেজানুল হক বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির মালিকানাধীন জলাশয়টির উত্তর পূর্বকোনে অবৈধভাবে ৫০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করে রেখেছেন। তিনি তাঁর পুকুরে খাদ্য ছিটিয়ে রাখেন ফলে বিস্তীর্ণ জলাশয়ের সব মাছ যায় ওই পুকুরটি দিকে।’
এভাবেই গত কয়েক বছর ধরে তিনি সরকারি নীতি নির্ধারকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করে চলেছেন। প্রতিবাদ করলে তিনি ভাড়াটিয়া লোকদের দিয়ে মৎস্যজীবীদের মারপিট করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ আরও জানান, ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পাঁচ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়েন জলাশয়টিতে। এছাড়াও প্রতি বছর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে আরও কয়েক টন মাছের পোনা ছাড়া হয়। প্রায় ৩০০ একরের এই জলাশয়টিতে বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মাছ রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভের কয়লা উত্তোলনের ফলে মাটি দেবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট গভারতায় এই জলাশয়টি সৃষ্টি হয়। জলাশয়টির মালিক বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ। খনির আবাসিক এলাকার বাইরে হওয়ায় এটির কোনো তদারকি তারা করে না। উপজেলা প্রশাসন এটার দেখভাল করে থাকে।
এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘মৎস্যজীবী খতিবর রহমান আমাকে মৌখিকভাবে মাছ শিকারের বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে এ আর বি ইটভাটা মালিক রেজওয়ানুল হকের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার মতো সবাই মাছ শিকার করছেন। আমি করলেই দোষ? এছাড়া আমার খননকৃত পুকুরটির জমির ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও আমি পাইনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদ বলেন, ‘এই মৌসুমে কোনো ধরনের মাছ শিকার আইনত দণ্ডনীয়। সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’