খালেদা জিয়ার জন্য দেখি অনেকের মায়াকান্না : প্রধানমন্ত্রী

ছবি : বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে। তাঁর জন্য দেখি অনেকের মায়াকান্না। এই যে আগুনে পোড়া মানুষগুলো বা এই যে ২০০১ এ আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী যে অত্যাচার, নির্যাতন করেছে, যারা এখনো পঙ্গু, স্প্লিন্টার নিয়ে যারা এখনো বেঁচে আছে, অনেকে মারা গেছে, অসহায় জীবনযাপন করছে, অথবা সেই ৭৫ সাল থেকে যদি আপনারা ধরেন, যারা আমরা স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আছি, তাদের কথা কি কারো মনে পড়ে না? তাদের ব্যথা কি ব্যথা বলে মনে হয় না?’
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনির স্ত্রী খুনি, আবার ছেলেও তাই। সেটা আবার কী এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সেই মামলা। আর দুর্নীতি তো আরো আছে। মামলায় হাজিরাই দেয় না, কোর্টেই যায় না। জানে যে কোর্টে এলেই তো চার্জশিট হয়ে যাবে, বিচার হলে সাজা একেবারে অবধারিত।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে যে দুর্নীতি আমরা না, কিছু এফবিআইয়ের রিপোর্টে বের হয়েছে, সেই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে তাঁর ছেলে (তারেক রহমান) যে ঘুষ খেয়েছে, দুর্নীতি করেছে। সিঙ্গাপুর থেকে কিছু টাকা আমরা ফেরত আনতে পেরেছি মানিলন্ডারিং করেছিল। তাদের জন্য এতটা মায়াকান্না? তাদের চিকিৎসার চিন্তা?’
‘চিকিৎসার চিন্তা যখন করে তখন আমার বার বার জিজ্ঞাসা করতে হয় যখন জেনারেল মেস্তাফিজুর রহমান, তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং আহত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এ আহত মুক্তিযোদ্ধা সেনাপ্রধান খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তাঁকে কোনো দিন সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে দেয় নাই। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, তাঁর যে প্রমোশন দিয়েছিলাম সেটাও কেড়ে নিয়েছিল। সিএমএইচের ডাক্তারদের সাহস ছিল না তাঁর চিকিৎসাটা করার। চিকিৎসাটা পর্যন্ত করতে দেয় নাই। স্ট্রেচারে করে কোর্টে হাজিরা দেওয়া হতো। তিনি তো একজন সেনাপ্রধানের স্ত্রী, আরেকজনকে এইভাবে অপমান, এটাও তো খালেদা জিয়া করেছে।’ বলছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে একটার পর একটা অন্যায় তারা করে গেছে, শুধু যে খুনিদের উৎসাহ করা, শুধু তাই না্, একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত মুক্তিযোদ্ধা, যাদের এত মহান ত্যাগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করেছে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কাদের আমার সেটাই ভাবতেই আমার অবাক লাগে। যাদের সব ধরনের অপকর্ম এ দেশের জন্য করে গেছে।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে অবরোধ-হরতালে প্রাণহানির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর নিজের বাসা গুলশান, অফিসও গুলশানে। গুলশানে বসে থেকে খালেদা জিয়া অসহযোগ আন্দোলন আর হরতাল। সেই অসহযোগ আন্দোলন কিন্তু এখনো তোলে নাই তারা। তাদের অবরোধও কিন্তু ওঠেনি। তাদের অবরোধ-হরতাল আর অগ্নিসন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষগুলো, যার কোনো অপরাধ নাই, তাদের পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করল। লঞ্চে আগুন, গাড়িতে আগুন, ট্রাকে আগুন, বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন। কোন জায়গাটায় নাই আগুন? গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, থামিয়ে ড্রাইভারকে টান দিয়ে নামিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন, সে জীবনভিক্ষা চাচ্ছে তাকে ছাড়েনি। সিএনজিতে যাচ্ছে, সিএনজিতে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে দিল, ড্রাইভারকে বের হতেই দিল না। এই রকম বীভৎস ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। এত অন্যায়, এত আল্লাহও সহ্য করে না।’
খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করা যায় না। তাই বাধা দেওয়া হয়। তখন বঙ্গভবন থেকে টেলিফোন যায়, খুনি মোশতাক টেলিফোন দিয়ে নির্দেশ দেয়। এরা যখন অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে যায়, তখনো বাধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বঙ্গভবন থেকে বলা হয়েছিল, আলোচনা করতে যাচ্ছে। যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই ঢুকতে দেওয়া হোক।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোশতাকের পতন যখনই অনিবার্য হয়ে পড়ল, সাথে-সাথে ওই খুনিদের একটি প্লেনে করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। প্রথমে তারা তাদের ব্যাংককে নিয়ে যায়। সেখানে বসে তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তাদের ভিসার ব্যবস্থা করে কোন দেশে যাবে, সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে কারা জড়িত, সেটাও কিন্তু ইতিহাসে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।