গ্রেনেড হামলা : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
আওয়ামী লীগের জনসভায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মদদদাতা হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের আদালতে এ আবেদন করেন বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী।
বাদী এবি সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছিলেন, ‘আজ বেলা সাড়ে ১১টায় মামলা গ্রহণের বিষয়ে শুনানি হবে।’
আরজিতে বলা হয়েছে, ‘খালেদা জিয়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় ওই সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হুকুমদাতা। বাদীর দৃষ্টিতে ঘটনার প্রধান আসামি হচ্ছেন খালেদা জিয়া। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে থলের বিড়াল বের হয়ে এসেছে।’
আরজিতে আরো বলা হয়েছে, ‘খালেদা জিয়া পরিকল্পনা করেছিলেন। মেজর জিয়াউর রহমান যেভাবে আড়ালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন, তারপরও তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি হননি। খালেদা জিয়াও তাঁর স্বামীকে ফলো করে আড়ালে থেকে জঙ্গিবাদী মুফতি হান্নানের দলবল দিয়ে শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের যাঁরা জীবিত আছেন এবং দলের শীর্ষ নেতাদের খুন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন।
মামলার অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের আগেই তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মুফতি হান্নান, ডিজিএফআই পরিচালক মেজর জেনারেল রেজাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই প্রধান ব্রিগেডিয়ার আব্দুর রহিম, পুলিশ প্রধান আশরাফুল হুদা এবং হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু, আলী হাসান মুজাহিদসহ সব প্রশাসন প্রধানদের সঙ্গে একটি গোপন বৈঠক করেন। সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কীভাবে ২১ আগস্টে ১৫ আগস্টের খুনের মতো শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সবাইকে হত্যা করে সফল হতে হবে।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনা যখন ভাষণ শুরু করেন, তখনই বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে দেওয়া হয়। গ্রেনেড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনাকে আড়াল করে জীবন রক্ষা করেছেন এবং তাঁকে যখন গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়, তখনো তাঁর গাড়িতে গুলি করা হয়। বুলেট প্রুফ গাড়ি হওয়ায় আল্লাহর রহমতে বেঁচে যান। কিন্তু সেই গ্রেনেডের আঘাতে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ঘটনাস্থলেই ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। কমপক্ষে ৩০০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হন।
‘আহত নেতকর্মীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান। তবে তাঁদের ভর্তি করা হয়নি। প্রশাসনের লোকজন দিয়ে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল (পিজি হাসপাতাল) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যখন খালেদা জিয়া জানতে পারেন যে, শেখ হাসিনা মারা যাননি, তখনই তিনি প্রশাসনের লোকদের নির্দেশ দেন, দ্রুত আলামত নষ্ট করার জন্য এবং যা যা দরকার, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য, যাতে তাঁর ওপর কোনো দোষ না ওঠে। প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে জানান যে, ঘটনাটি দুঃখজনক ব্যাপার, একটি দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করে সঠিক বিচারের কবর দেন। খালেদা জিয়ার হুকুমে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’
এদিকে, এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, শেখ হেলাল ও হাজি মো. মাহবুব আব্দুল্লাহকে।