ঘুষ নেওয়া প্রকৌশলীদের নাম জিজ্ঞাসা করেছে দুদক

অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, বিদেশে অর্থ পাচার এবং প্রকৌশলীদের সঙ্গে গোপন লেনদেনের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
আজ রোববার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সালাউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে একটি টিম তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম তার অবৈধ অর্থ উপার্জন,বিদেশে অর্থ পাচার এবং কীভাবে প্রকৌশলীদের সঙ্গে গোপন লেনদেন করে তার বিষয়ে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করে।’ তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম যেসব প্রকৌশলীদের ঘুষ দিয়েছে তারা কারা সেই বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী কথিত যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সাত দিনের রিমান্ডে আজ প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদ করছে সংস্থাটি।
এর আগে ২১ অক্টোবর শামীম ও তাঁর মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
মামলার পরপরই অন্য মামলায় কারাগারে থাকা শামীম ও খালেদকে নিজেদের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে যান দুদক কর্মকর্তারা। শুনানি শেষে আদালত তাদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুদকের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করলেও মোট টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
এ ছাড়া শামীমের বাসা থেকে উদ্ধারকৃত নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরো ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে জি কে শামীমের মা আয়েশা আক্তারের কোনো বৈধ আয়ের উৎসও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ মোট ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে দায়ে ২৭ (১) ধারা ও দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মা ও ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আরো সম্পদের খোঁজে রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
কথিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীম নিজের পরিচয় দিতেন যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিতেন। চলতেন ছয়জন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় কাজের প্রায় সবই ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠানের কবজায়।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। ওই দিন তার কার্যালয় থেকে নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, নয় হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়।