ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি, দাবি বন বিভাগের

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে পূর্ব সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামো ও নৌযানের। বন্যপ্রাণীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বনের কোথাও বন্যপ্রাণী মারা যাওয়া কিংবা আহত হওয়ার মতো খবর নেই বন বিভাগের কাছে। এদিকে বনের গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে কাজ চলছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তা জানা যাবে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বুলবুলের আঘাতে চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ছয়টি আবাসিক ভবন ও ১৭টি অনাবাসিক ভবনের আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এগুলোর কোনোটির চাল উড়ে গেছে, কোনোটির দেয়াল ধসে পড়েছে। বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে থাকা ১০টি জেটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৯টি অন্যান্য স্থাপনারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, পন্টুন, ফুট ট্রেইলার, গ্যাংওয়ে, হরিণের খাঁচা, পাহারা ঘর ও সোলার প্যানেল। ক্ষতি হয়েছে বন বিভাগের একটি স্পিডবোট ও দুটি ট্রলারের। বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের সাতটি স্টেশন ও ৩৩টি টহল ফাঁড়ির অবকাঠামোগত ও নৌযানের এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার।
ঝড়ের পর চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহিন কবির ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চল পরিদর্শন শেষে ক্ষয়ক্ষতির এ প্রতিবেদন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসানের কাছে জমা দিয়েছেন। এ দুই কর্মকর্তার আগামী দু-একদিনের মধ্যে বনের গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বঙ্গোপসাগরপাড়ের সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলারচরের জেলেপল্লীতেও কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চরে শুঁটকি কারবারি জেলেদের গড়ে তোলা অস্থায়ী বসতঘর, মাচা ও গুদামঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তার মাত্রা খুব বেশি নয়। কারণ, চরের অধিকাংশ ঘরই সস্তা ও সহজলভ্য বাঁশ, গোলপাতা, হোগলা ও পলিথিন দিয়ে তৈরি। ঝড়ে ওই সব ঘর, মাচা, চাল, বেড়া ও পলিথিন উড়ে গেলে তা আবার ঠিক করে নিয়েছেন তাঁরা। আর শুঁটকির মৌসুম মাত্র শুরু হওয়ায় তেমন ক্ষতি হয়নি শুঁটকি মাছেরও।
গত ১ নভেম্বর থেকে দুবলারচরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী আগে থেকেই দুবলারচরের জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়। জেলেরাও সতর্কতাবস্থায় থাকায় তাঁদের ট্রলার ও জাল দড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি।
‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট-বড় সব দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে উপকূলের জনসাধারণকে আগলে রাখছে সুন্দরবন। তাই সুন্দরবনই আমাদের রক্ষাকবচ। এর যত্ন না নিলে আমাদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই আমাদের সবাইকেই যে যার অবস্থান থেকে সুন্দরবন রক্ষা করতে হবে। বিগত সিডর ও আইলায় যে প্রাণহানি ঘটেছিল, যদি সুন্দরবন না থাকত, তাহলে তা আরো ভয়াবহ হতো। এবার বুলবুলের তাণ্ডব থেকে মোংলাসহ আশপাশ উপকূলের লোকজনকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন।’