চেয়ারম্যানকে ঘুসি দেওয়ার অভিযোগ : যা বললেন সংসদ সদস্য রাজী
জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে ঘুসি দেওয়ার অভিযোগের পর ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। গণমাধ্যমে আজ রোববার পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি নিজের দাবির ওপর ব্যাখ্যা দেন।
বিবৃতিতে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি বিব্রত। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব বাছাই ও সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২১ জুলাই সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ শুরু থেকেই এ সম্মেলন পণ্ড করতে তৎপর ছিলেন। শুধু তাই নয়, আবুল কালাম আজাদ গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক রানাকে ফোন করে সম্মেলন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মীসভা বন্ধ করতে হুমকি দেন। ভানী ইউনিয়নে কর্মী সভায় কেউ এলে সে হাত-পা নিয়ে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে পারবে না বলেও হুমকি দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।’
সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, ‘গত ২ জুলাই সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ফেরার পথে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সমর্থকেরা আমার গাড়ি কুমিল্লায় অবরোধ করে রাখেন। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং দেবীদ্বার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিরুজ্জামান মাস্টারকে হত্যার উদ্দেশ্যে হুমকি দেওয়া হয়।’
১৬ জুলাইয়ের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজী বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদের মেম্বারস ক্লাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সুন্দরভাবে সম্পন্নের পর ব্রিফিংও শেষ—ঠিক এমন সময় এলাহাবাদ ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। তখন আমি সবাইকে শান্ত হতে বলি। এ সময় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ আমাকে উদ্দেশ করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে গালি-গালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে আক্রমণের জন্য তেড়ে আসেন তিনি। অল্পের জন্য বড় আঘাত থেকে রক্ষা পাই। এমতাবস্থায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন তাঁকে শান্ত করতে গেলে তাঁর বুকে ধাক্কা দেন, যার সিসিটিভি ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের হস্তক্ষেপে আবুল কালাম আজাদ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।’
রাজী বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার এককভাবে ফেসবুকে এলাহাবাদ কমিটি ঘোষণা করলে তৃণমূলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমাদের সবার অভিভাবক। তাঁর ওপর জেলার সাধারণ সম্পাদক জনাব রওশন আলী মাস্টার ও আবুল কালাম আজাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি এবং পরবর্তী সময়ে শারীরিক নির্যাতন অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। পাশাপাশি সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে একজন আইন প্রণেতার প্রতি আক্রমণ শুধু ন্যাক্কারজনক নয়, দেশের সব সংসদ সদস্যদের প্রতি অবমাননার সামিল।’
সংসদ সদস্য রাজী বলেন, ‘সংসদ ভবনের এলডি হলে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করি, কেন্দ্রীয় কমিটি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে গত ১৬ জুলাই কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল কিলঘুসি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।