ছবিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/08/15/1.jpg)
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ছবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/2.jpg 687w)
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার এবং মা সায়েরা খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় সন্তান।
১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন শেখ মুজিব। নয় বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে এবং পরে ম্যাট্রিক পাস করেন গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে। খেলাধুলায় খুব উৎসাহ ছিল তাঁর। তরুণ বয়সে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতেন তিনি।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/3.jpg 687w)
তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাস করার পর শেখ মুজিব ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে, যেটির বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ। ১৯৪৭ সালে সেখান থেকেই তিনি বিএ পাস করেন। ওই কলেজে পড়ার সময় কলকাতায় সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর ঘরে থাকতেন শেখ মুজিবুর রহমান, যে ঘরটিকে এখন জাদুঘর করা হয়েছে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/08/15/4.jpg)
কলকাতায় কলেজে পড়ার সময় থেকেই শেখ মুজিব সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। তিনি ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৪৬ সালে এবং এ সময়েই তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হয়েছিলেন।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/5.jpg 687w)
১৯৪৬-এর প্রাদেশিক নির্বাচনে শেখ মুজিব মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বেঙ্গল মুসলিম লীগে। তিনি পাকিস্তানে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে বেঙ্গল মুসলিম লীগের হয়ে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেন ১৯৪৬ সালে। কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর শেখ মুজিব শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। দাঙ্গার বিরুদ্ধে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর শান্তি মিশনে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে কথা বলতে তিনি ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দেখা করেন গান্ধীর সঙ্গে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/6.jpg 579w)
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পর শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন এবং তাঁকে পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/7.jpg 687w)
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নামে গঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোটের টিকেটে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে গোপালগঞ্জ আসন থেকে বিজয়ী হন শেখ মুজিব। তাঁকে তখন কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওই জোটের মূল দাবি ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসন।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/8.jpg 687w)
১৯৫৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। শেখ মুজিব আবার দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে শেখ মুজিব প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সরকারে মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আতাউর রহমান খান। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে কাজ অব্যাহত রাখার জন্য তিনি মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন ১৯৫৭ সালে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/9.jpg 598w)
দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৫৭ সালের ২৪ জুন শেখ মুজিব চীনে সরকারি সফরে যান।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/10.jpg 644w)
পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করা হয়। সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অন্য সাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে ১৯৬১ সালে গোপনে তিনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন, যার লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা। বিভিন্ন জনসভায় আইয়ুব খানের শাসনের বিরোধিতা করে ভাষণ দিতে থাকেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/11.jpg 687w)
১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘ছয় দফা দাবি’ পেশ করেন। এর ফলে তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে যে মামলাটি হয়, তাতে ১ নম্বর আসামি করা হয় ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি। বলা হলো, শেখ মুজিব ও তাঁর সহযোগী বাঙালি কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সঙ্গে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/12.jpg 549w)
ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তা একসময় গণআন্দোলনে রূপ নেয়। সেই গণআন্দোলন বা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান চরম রূপ ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত এই মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/13.jpg 687w)
রেসকোর্স ময়দানে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক বিশাল জনসভায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিব তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় দেশের জনগণকে ছয় দফার ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দলের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ‘নৌকা’।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/14.jpg 687w)
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে ওই নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি করে। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো শেখ মুজিবের স্বায়ত্তশাসনের নীতির প্রবল বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন স্থগিত করলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারল যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হবে না।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/15.jpg 687w)
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এক জনসভায় শেখ মুজিব সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতা-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বাত্মক হামলা চালালে শুরু হয় বাংলাদেশের ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র স্বাধীনতা-সংগ্রাম।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/16.jpg 687w)
শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এবং ফয়সালাবাদের একটি জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। এরপর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/17.jpg 687w)
বাংলাদেশে ফিরে অল্পদিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের কথা।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/18.jpg 687w)
যুদ্ধবিধ্বস্ত নতুন দেশকে গড়ে তুলতে বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রে গেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের পর শেখ মুজিব ওআইসি, জাতিসংঘ ও জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের জন্য মানবিক ও উন্নয়নকল্পের জন্য সহযোগিতা চান।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/19.jpg 602w)
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ভূমিকার প্রেক্ষাপটে দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় সফরে এসে ভারতের পক্ষে এবং বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/08/15/20.jpg 687w)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের যে বাড়িটি থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যে বাড়ি থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের রাতে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাতে সেই বাড়িতেই সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।