ছেলের করোনাভাইরাসের গুজবে মায়ের মৃত্যু

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের বাসিন্দা রতন বালা রপ্তান (৩৫) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন—এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মা রেনুকা রপ্তানের (৫৬) মৃত্যু হয়েছে।
এ খবর জানিয়েছেন পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘কে বা কারা এই গুজব ছড়িয়েছিল, রেনুকা বালার মৃত্যুর পর তা আর কেউ স্বীকার করছেন না। তবে পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন রতন রপ্তানের খোঁজখবর নিচ্ছিল।’
চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘পাতাখালি গ্রামের রতন রপ্তান সম্প্রতি পাসপোর্ট করে ভারতে যান। সেখান থেকে গত রোববার ফিরে আসেন তিনি। সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে আসার পর করোনাভাইরাস চেকআপের সময় তাঁর সর্দিকাশি ও দেহে জ্বর ধরা পড়ে। চেকআপ ইউনিটের কর্মকর্তারা তাঁকে পাঠিয়ে দেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। সেখানে রক্ত নেওয়ার পর একইভাবে জ্বর, সর্দিকাশি ধরা পড়ে তাঁর। তবে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তা সত্ত্বেও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হলে তিনি পালিয়ে যান। এরই মধ্যে বিষয়টি চারদিকে জানাজানি হয়ে যায়। পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাঁকে খুঁজতে থাকে। পেশায় দিনমজুর রতন রপ্তান বাড়ি পৌঁছানোর পর বিষয়টি আরো বেশি জানাজানি হয়ে যায়। এরই মধ্যে কে বা কারা গুজব রটায় যে রতন রপ্তানের দেহে করোনাভাইরাস রয়েছে। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে, পেলে গুলি করে মারবে। এ কথা তাঁর মা রেনুকা বালা শুনতে পান। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।’
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অজয় সাহা বলেন, ‘রতন রপ্তানকে করোনাভাইরাস সন্দেহে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাঁর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গুজব রটনায় তাঁর মা মারা গেছেন কি না, তা আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘রতনের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার মানুষের গুজবের জন্য রতনের মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিষয়টি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক।’
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, এ সম্পর্কে তাঁর কিছুই জানা নেই।
পদ্মপুকুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন ‘গুজব রটনার জের হিসেবে রতনের মা মারা গেলেন। আমরা সবাই এ জন্য ব্যথিত।’