ছেলে সেজে ‘নারীর প্রতারণা’, প্রাণ হারাল কিশোরী
নাম রূপা খাতুন। কিন্তু ছেলে সেজে নাম বদলে হয়ে যেতেন রূপ। এভাবে ছদ্মবেশ নিয়ে কিশোরী-যুবতীদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সমকামীতায় বাধ্য করতেন বলে এক নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ছেলে সেজে সাদিয়া ইসলাম মৌ নামের এক স্কুলছাত্রীকে ফাঁসানোর চেষ্টায় ছিলেন বলে রূপার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাদিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, সাদিয়ার মৃত্যু নিয়েও তৈরি হয়েছে রহস্য। একজনের পরিবার দোষ চাপাচ্ছে আরেকজনের পরিবারের ওপরে। তবে এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত মামলা করেনি।
সাদিয়া নাটোর শহরের চৌধুরী বড়গাছা এলাকার রিকশাচালক আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে। সে বড়গাছা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার ভাবির বড় বোন রূপা খাতুন। রূপা টিকটকে ছেলে সেজে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুলছাত্রী সাদিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে এলাকাবাসী ও সাদিয়ার স্বজনরা মানবন্ধন করে ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। তবে পুলিশ সাদিয়ার বাড়িতে গেলেও তার পরিবার মামলা দেয়নি।
এলাকাবাসী বলছে, রূপা নারী হলেও পুরুষ সেজে রূপ নামধারণ করে সাদিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। টিকটকে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন তিনি। এভাবেই কৌশলে সাদিয়াকে তাঁর সঙ্গে সমকামিতায় জড়ানোর নেওয়ার চেষ্টা করেন রূপা।
এরই একপর্যায়ে গত ২১ আগস্ট সাদিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান রূপা। তিনদিন পর গত ২৪ আগস্ট সকালে সাদিয়াকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে আসেন তিনি।
ওইদিনই রূপা ও সাদিয়াকে ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ (ইঁদুর মারা বিষ) খাওয়া অবস্থায় পায় তাদের পরিবার। এ অবস্থায় রূপার পরিবার তাদের দুজনকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সাদিয়ার। তবে বেঁচে যান রূপা। মৃত্যুর পরদিন ২৫ আগস্ট অনেকটা গোপনেই দাফন করা হয় সাদিয়ার লাশ। আর সুস্থ হয়ে আত্মগোপনে চলে যান রূপা খাতুন।
সাদিয়ার ভাই সনি ও চাচাতো ভাই জনির অভিযোগ, রূপার পরিবারের সদস্যরা সাদিয়াকে নির্যাতন করে ও ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ খাইয়ে হত্যা করেছে।
অন্যদিকে, রূপার বাবা রুবেল হোসেন উল্টো অভিযোগ করেন, সমকামিতার কারণে সাদিয়ার পরিবারের সদস্যরাই দুজনকে ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ খাইয়েছে।
এদিকে, গতকাল শনিবার এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী ও সাদিয়ার স্বজনরা সাদিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে রূপার পরিবারের বিরুদ্ধে কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন করেন। তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এদিকে, মানববন্ধনের খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সাদিয়ার বাড়িতে যান নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন। তিনি সাদিয়ার পরিবারকে মামলার জন্য বলেন। এ সময় সাদিয়ার মা সুফিয়া বেগম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা করার সিদ্ধান্ত জানান।
এ ব্যাপারে আবদুল মতিন বলেন, ‘পরিবার মামলা না করায় পুলিশের করার কিছু নেই।’