‘জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের অর্থ ঠিকমতো ব্যবহার করা জরুরি’
জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বা ‘কপ টোয়েন্টি সিক্স’-এর প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ এমপি অলোক শর্মা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের জন্য অর্থ জোগাড় করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেই অর্থ ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারাটাও জরুরি। অলোক শর্মা ঢাকা সফরের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা বলেন।
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো শহরে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বা কপ টোয়েন্টি সিক্স অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনের পূর্ব-আলাপ আলোচনার জন্য ঢাকা সফরে আসেন অলোক শর্মা। তিনি বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ একেবারে নামিয়ে আনার জন্য এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের জন্য সম্মেলনের গুরুত্ব কতটা?
ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাংলাদেশের উপকূল প্লাবিত হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন প্রায় প্রতিবছরই ঘটছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এ ধরনের দুর্যোগ ঘন-ঘন হতে থাকবে।
ফলে উপকূলের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য লাগবে টাকা। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে জোরালো আলোচনা হবে।
কপ টোয়েন্টি সিক্স-এর প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেন, প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করার জন্য উন্নত দেশগুলো যাতে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। তবে তিনি বলেন, এই অর্থ জোগাড় করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ঠিকমতো ব্যবহার করাটাও জরুরি।
অলোক শর্মা বলেন, ‘অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী মার্চ মাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করবো। কপ টোয়েন্টি সিক্স-এর আওতায় তরুণ ও সুশীল সমাজকে নিয়ে আমি একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেছি। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং তাদের কথা শুনি। উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বেশি অর্থ জোগাড় করা ছাড়াও আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে সেটি ঠিকমতো খরচ হচ্ছে।’
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:
১. ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা। কারণ, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ একেবারে শূন্যতে নামিয়ে আনতে হলে এটি করা জরুরি।
২. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে থাকবে, সেগুলোর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. এসব কাজ করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। সেজন্য প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল করার জন্য উন্নত দেশগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কী থাকবে সম্মেলনে?
২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষতিকারক কার্বন নির্গমণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করবে এই সম্মেলন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ গুরুত্ব না দিলেও তাদের জীবনে এর প্রভাব থেমে নেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে অনেকে শহরে এসে আশ্রয় নেয়। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় তারা হচ্ছে জলবায়ু শরণার্থী। অনেকে বলেন, যেসব উন্নত দেশের কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেসব শরণার্থীকে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়া উচিত।
কিন্তু কপ টোয়েন্টি সিক্স প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেন, ‘আমরা যেটা করতে চাই সেটা হচ্ছে, মানুষজন যাতে তাদের নিজেদের বাড়িতেই থাকতে পারে সেজন্য তাদের সহায়তা করা।’
‘যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানো না যায় এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপায় বের না করি, তাহলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে’, যোগ করেন অলোক শর্মা।
পরিবেশকে রক্ষার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কপ টোয়েন্টি সিক্সে আলোচনা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়টি জোরদার করা, বনভূমি যেভাবে উজাড় হয়ে যাচ্ছে, সেটি কমিয়ে আনা, বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা।
অলোক শর্মা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে। আমি নিজ চোখে সুন্দরবনে গিয়ে দেখেছি, বাংলাদেশের বহু মানুষ সে এলাকায় ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও লাখ-লাখ মানুষ ঝুঁকিতে আছে। তাদের সহায়তা করতে হবে।’