জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষকসহ ৩ জন গ্রেপ্তার
নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক এবং বোমা প্রস্তুতকারকসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গতকাল মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আজ বুধবার দুপুর ১২টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন—মো. জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান, সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, ঢাকনাযুক্ত জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোলড ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন এবং একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “গ্রেপ্তার করা মো. জাহিদ হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স (স্নাতক) সম্পন্ন করেছে। জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়ায় এবং হিজরত করায় মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) সম্পন্ন করতে পারেনি। অনলাইনে ২০১৬ সালে ‘হোয়াইট হাউজের মুফতি’ নামের আইডির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নব্য জেএমবি’র তৎকালীন আমির মুসার হাত ধরে সে এই সংগঠনে যোগদান করে। আমির মুসার সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সংগঠনের ওই সময়ের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের নজরে আসে এবং তাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে কাজ করে।”
‘রসায়নে পারদর্শী হওয়ার কারণে তার মেধা ও সাহসের জন্য তাকে (মো. জাহিদ হাসান) এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রসায়নের ছাত্র হওয়ার সুবাদে সে অল্পদিনে গ্রেনেড ও বোমা বানানোয় অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠে এবং নিত্যনতুন কৌশলে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) প্রস্তুত করে। এই সংগঠনের যারা বোমা ও গ্রেনেড তৈরি করত, তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিত জাহিদ’, যোগ করেন মো. আসাদুজ্জামান।
সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জিএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা গ্রেপ্তার বা নিহত হলে এই সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় গ্রেপ্তার করা জাহিদ গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে চলে যায়। পুনরায় সে নতুন আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যারা অত্যন্ত সাহসী ও সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের মধ্য থেকে বাছাই করা সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোলড বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত। সে সংগঠনটির কার্যক্রম বিস্তৃত করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং করেন। শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে।’
‘জাহিদ বড় কোনো কেমিক্যাল সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকরি করে, সেখান থেকে এক্সপ্লোসিভ তৈরির উপাদান নিয়ে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তার। সর্বশেষ সে ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিল। ড্রোনের সঙ্গে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও সে জড়িত ছিল। আমিরের নির্দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে, মো. জাহিদ হাসান সেসব হামলায় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছে’, যোগ করেন মো. আসাদুজ্জামান।
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা অপর অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মারুফ বোমা তৈরির একজন দক্ষ কারিগর। সে অনলাইনে জাহিদের কাছ থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। সাইফুল ইসলাম মারুফ এবং গ্রেপ্তার করা অপর অভিযুক্ত মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদসহ সংগঠনের সিদ্ধান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার লক্ষ্যে বান্দরবান এলাকায় হিজরত করে। সংগঠনের ফান্ড তৈরির নিমিত্তে ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতি করার জন্য টঙ্গী থানাধীন রেলগেট এলাকায় রুম ভাড়া নেয়।’
মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা মামলা করা হয়েছে। আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।