ত্রিশাল থানার ওসির গ্রামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে টিভি বন্ধের নির্দেশ
ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন গ্রামের হাট-বাজার বা রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে টেলিভিশন প্রদর্শন বন্ধে মাইকিং করছেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আবার এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।
গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে হ্যান্ডমাইক নিয়ে প্রচারণা চালান ওসি মাইন উদ্দিন। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রচারণা চালাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ত্রিশাল থানার ওসি বলেন, ‘চায়ের দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেলিভিশন প্রদর্শন করার মৌখিক অভিযোগ পেয়ে খোঁজখবর নিয়ে চায়ের দোকানে টিভি প্রদর্শন বন্ধ করার উদ্যোগ নিই। পরে ১১ মে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে প্রথম প্রচারণা শুরু করি। এখন সাকুয়া, মঠবাড়িয়া ও ত্রিশাল ইউনিয়নে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রচারণা চালানো হবে।’
ওসি বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও চায়ের দোকান বিনোদনের জায়গা নয়। এসব স্থানে টেলিভিশন চালানোর কারণে উঠতি বয়সের যুবকরাসহ লোকজন গভীর রাত পর্যন্ত অহেতুক আড্ডায় বসে সময় পার করে। আইপিএল খেলা দেখছেন, যুবকরা অনলাইনে বাজি ধরেন। বাজিতে হেরে টাকার সমস্যা হলে অনেকে বন্ধু বা দোকানদারের কাছ থেকে অধিক সুদে টাকা নিয়ে ঋণগ্রস্ত হন। পরিবারের কাছে টাকার জন্য চাপ দেন। পরে যুবকরা টাকা না পেয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।’
ওসি আরও বলেন, ‘গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারে সময় না দিয়ে টিভি দেখায় মেতে থাকায় পরিবারে অশান্তি দেখা দিতে পারে, অভিভাবকের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সন্তানরা বিপথে যা্চ্ছে। পারিবারকে সময় না দেওয়ায় পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করেই টিভি প্রদর্শন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, এতে সমাজে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।’
যে সব এলাকার বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও চায়ের দোকানে টিভি বন্ধ করা হয়েছে সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
পরিচয় গোপন রাখার প্রতিশ্রুতিতে ওই সব এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ‘আগে রাত ৯টা পর্যন্ত ৫০০ কাপ চা বিক্রি হতো, এখন দেড়শ কাপ চা বিক্রি হচ্ছে না। তা ছাড়া সারা দিন কাজ শেষে নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের টিভি নেই তারা চা পানের পাশাপাশি টিভি দেখে বিনোদন উপভোগ করতেন। টিভি বন্ধ করে ওসি সাব ভালো কাজ করলেও আমাদের আয় কমেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমার পদক্ষেপ হচ্ছে সমাজে অপরাধ বন্ধের জন্য, চুরি, জুয়া বন্ধ, যুবসমাজক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। এ জন্য কারো ব্যবসা খারাপ হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।’
ত্রিশাল থানার ওসি সবাইকে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন ও দেখার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে ত্রিশালের অধীবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, ‘এখন গ্রামে-গঞ্জে টিভি হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। সারা দিন কর্মক্লান্ত মানুষজন যাদের টিভি নেই তারা চা পানের পাশাপাশি টিভি দেখে বিনোদন উপভোগ করেন। টিভি বিনোদন বন্ধ করে অপরাধ বন্ধ বা দমন করা যাবে—এমন ধারণা সঠিক নয়।’
এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য টিভি ঠিকই ছিল। সবাই একত্রে বসে থাকত। আপরাধ কম হতো। এখন তো অপরাধ বাড়তে পারে। এজন্য কিছু দিনের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থা সঠিক হলেও বেশি দিন থাকলে সবাই আড়ালে আবডালে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য কিছু দিন পর বিদ্যমান বিধি-নিষেধ শিথিল করা যেতে পারে।’