দূষণ ও দখলে মরে যাচ্ছে বাংলাদেশের নদী

শিল্পবর্জ্যের দূষণ আর দখলে মরে যাচ্ছে বাংলাদেশের নদ-নদী। বাংলাদেশ একদিকে পরিণত হচ্ছে শুষ্ক ভূমিখণ্ডে, অন্যদিকে এসব মৃতপ্রায় নদ-নদীর পানি উপচে লোকালয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। এর ফলে জনমানুষের জীবনে ধেয়ে আসছে নানা ধরনের সংকট।
আজ সোমবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, এরই মধ্যে অতিরিক্ত পানির তোড়ে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা বাংলাদেশের নিরাপদ স্থানে যাযাবরের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে আড়াই কোটি মানুষ নদীর স্ফীত জলরাশির কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া তাদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাংলাদেশ ক্রমেই মরুয়ায়ণের দিকে চলে যাবে। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সেই সংস্কৃতি আর টিকে থাকবে না। এ জন্য নদীকে শাসন নয়, বরং খনন করে এর দখলদারদের উচ্ছেদ করা জরুরি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ৭০০ থেকে ৪০৫-এ নেমে এসেছে। এর মধ্যে শ তিনেক নদী সচল থাকলেও বাকিগুলো মৃতপ্রায়। ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে ৫২টি নদীর সংযোগ রয়েছে উল্লেখ করে আলোচকরা আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে নদী সচল রাখতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির। অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জোহরা, জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, ‘স্বদেশ’ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, বেসরকারি সংস্থা ‘হেড’-এর নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ফারিদা আক্তার বিউটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।
আলোচকরা বলেন, পলি পড়ে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র নদী দখল চলছে। একই সঙ্গে শিল্পবর্জ্য ফেলে নদীর দূষণমাত্রা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। এর কুফল হিসেবে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদী এরই মধ্যে মরে গেছে। ২৭টির মধ্যে অন্য নদীগুলো কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। অতিবৃষ্টির কারণে এসব নদী উপচে পানি উঁচু ভূমিতে চলে আসছে। ফলে তলিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। বক্তারা বলেন, কপোতাক্ষ তবু কিছুটা খনন হয়েছে। বেতনা খননের দাবি রাখে। এ ছাড়া সোনাই, মরিচ্চাপ নদী এবং সাতক্ষীরার ৩২৭টি খাল খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে এসব নদী ও খাল দখলদারদের উচ্ছেদ করাটাই জরুরি হয়ে পড়েছে।