দেশে সেনা শাসনের চেয়েও খারাপ অবস্থা চলছে : মেজর হাফিজ
দেশে এখন সেনা শাসনের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করেছিলাম ভোটের অধিকার আর গণতন্ত্রের জন্যে। আজ সেই অধিকারই আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর জিলা স্কুল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লাখো মা-বোনের রক্ত আর মুক্তিযোদ্ধাদের অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া প্রাণের বিনিময়ে যেখানে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলাম আমরা, সেখানে ২৬ মার্চের পর দেশে ফিরে স্বাধীনতার নতুন ইতিহাস লিখতে শুরু করল শরণার্থীরা।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজ বলেন, ‘১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে অনেক নেতা অনেক বড় বড় বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু ২৫ মার্চ রাতে যখন হানাদার বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালাল তখন আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেদিন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই সাত কোটি মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বক্তৃতা অনেকেই দিতে পারে কিন্তু সত্যিকারের বিপদে যাঁরা নেতৃত্ব দেয় তারাই প্রকৃত নেতা। শহীদ জিয়ার সেদিনের সেই ঘোষণার পর ইস্ট বেঙ্গলের পাঁচটি রেজিমেন্ট স্বাধীনতার পক্ষে বিদ্রোহ করে। একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে বিদ্রোহ করা সহজ। কিন্তু একজন সৈনিকের জন্য নিজের বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা আত্মহত্যার সামিল। আজ আওয়ামী লীগ শহীদ জিয়াকে একজন অখ্যাত মেজর বলে। আরে ভাই, সে তো অখ্যাতই ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া এবং তাঁর সেই ঘোষণায় যখন উজ্জ্বীবিত হয়ে সারা দেশ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন সে আর অখ্যাত রইল কই?’
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী, দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেন ও উত্তরের তাবিথ আউয়াল, চট্টগ্রামের ডা. শাহাদাত হোসেন, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান, বিলকিস জাহান শিরিন, মেসবাহ উদ্দিন ফরহাদ, বিএনপির নেতা হায়দার আলী লেনিন, নূরুল ইসলাম নয়ন, মোরতাজুল করিম বাদরু, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, আকন কুদ্দুসুর রহমান, এবায়েদুল হক চান, আবুল কালাম শাহিন, জিয়াউদ্দিন সরদার, স্নেহাংশু সরকার কুট্টি, অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা, আক্তারুজ্জামান শামিম, আনোয়ারুল হক তারিন এবং মো. তসলিমসহ অনেকে।
বক্তব্যে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলির কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গতকাল বুধবার সেনাপ্রধানের একটি বিবৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাঁর সোনার টুকরো ভাইদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কী অদ্ভুত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাস করছি আমরা। ১২ থেকে ১৪টি মামলার আসামি হয়েও তাঁরা বিদেশে রাজার হালে বসবাস করছে। আর গণমাধ্যম তাই নিয়ে সংবাদ প্রচার করলে সেনাপ্রধান বলছেন যে, তাঁকে হেয় করা মানে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা। তাঁর সোনার টুকরা ভাইরা বলেছেন যে, পুলিশই নাকি তাদের গুণ্ডা। যাঁরা পুলিশ বিভাগে আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘আপনাদের লজ্জা হয় না? একটা সন্ত্রাসীর প্রাইভেট বাহিনী হয়ে আপনারা কাজ করছেন?’
‘আজ দেশের মানুষের কোনো অধিকার নেই’ উল্লেখ করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ বলেন, ‘রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অকার্যকর করাই কেবল নয়, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার। এই অবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র আর ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে মাঠে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
এরপর প্রতিবাদ সভায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে আজ প্রথম ঢাকার বাইরে কোনো সমাবেশে অংশ নিতে এসে পথে পথে বাধার মুখোমুখি হয়েছি। আমাকে ফেরি পার হতে বাধা দেওয়া হয়েছে। গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। বরিশালে এসেও পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। দেশে যে গণতন্ত্র নেই, এটাই তার প্রমাণ। এখন সবার আগে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নামতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
এ সময় ঢাকা উত্তরের পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘এই সরকার এখন কেবলই বাহিনীনির্ভর সরকার। জনগণের সমর্থন না থাকায় তারা এখন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি আর অন্য বাহিনীর ওপর ভর করে টিকে আছে। আগে এরা ভোট কারচুপি আর জালিয়াতি করত। এখন তারা ভোটার দমনে নেমেছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিন ভোটের অধিকার ফিরে আসবে না।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, ইভিএম মেশিন চোর হ্যায়। এখন ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট চুরি চলছে। এই ইভিএম এখন ভোট ডাকাতির অন্যতম বড় হাতিয়ার। আমরা এই মাফিয়া সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন চাই না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘আমরা এতদিন বলেছি বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এখন বলছি কেবল বর্তমান নির্বাচন কমিশনই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনও নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘এই সরকার যে কত বড় ভোট ডাকাত, তা আমরা এক যুগ ধরে দেখেছি। হুদা-হাসিনা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এই সরকারের অধীনে আমরা আর কোনো নির্বাচন করতে চাই না।’
সমাবেশের বক্তৃতায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের চেষ্টার বিরুদ্ধেও কথা বলেন বক্তারা। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাঁর পাওয়া বীর উত্তম পদবি বাতিল করা হলে দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।
সমাবেশ উপলক্ষে আজ সকাল থেকেই বরিশাল নগরজুড়ে ছিল পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।