নওগাঁয় সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারিতে চালের দাম কমেছে কেজিতে ৩ টাকা
নওগাঁয় পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে তিন টাকা কমেছে। জেলা প্রশাসনের অভিযানের পর ধানের দাম কমে যাওয়ায় চালের বাজারেও প্রভাব পড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এদিকে ধানের দাম কমে যাওয়ায় মলিন কৃষকের মুখ। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
জানা যায়, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের মতো নওগাঁর চালকল ও ধানের আড়তের গুদামে ধান ও চালের অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। অভিযান শুরুর পর গত এক সপ্তাহে প্রকারভেদে ধানের দাম প্রতি মণে দেড়শ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। ধানের দাম কমায় পাইকারি বাজারে চালের দামও কমে যায়।
নওগাঁ জেলা ধান ও চালের আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন এনটিভি অনলাইনকে জানান, সরকার ধান ও চালের অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে জরিমানার ভয়ে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার লাইসেন্স নেই এমন অনেক মজুতদার ছিলেন, যাঁরা এখন ধান কিনছেন না। ফলে, ধানের দাম গত এক সপ্তাহে প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ ছাড়া অবৈধ মজুত বিরোধী অভিযানের ভয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় বাজারের চালের আড়তদাররা নওগাঁর মোকাম থেকে চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এজন্যই চালের দাম কমে গেছে।’
নিরোদ বরণ সাহা চন্দন আরও জানান, গত এক সপ্তাহ আগে সম্পা কাটারি নাজির চাল প্রকার ভেদে কেজি প্রতি বিক্রি হতো ৬২ থেকে ৬৬ টাকা। জিরাশাইল ও মিনিকেট চাল বিক্রি হতো ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, স্বর্ণা-৫ চাল বিক্রি হতো ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। আজ বৃহস্পতিবার বাজারে চালের দাম সম্পা কাটারি নাজির চাল প্রকার ভেদে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা। জিরাশাইল ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬১ টাকা, স্বর্ণা-৫ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা।
জেলার অন্যতম বড় ধানের বাজার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ছায়তনতলী হাট। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এই হাটে ধানের আড়তদার ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটিতে প্রতি মণ জিরা ধান মানভেদে এক হাজার ২৩০ থেকে এক হাজার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সোমবার এই বাজারে জিরা ধানের দাম ছিল এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। আর কাটারিভোগ ধানের দাম গত সোমবার বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪৫০ টাকায়। সেই ধান এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকায়।
হঠাৎ ধানের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। ছায়তনতলী বাজারে মহাদেবপুর উপজেলার হাতুড় গ্রাম থেকে ধান বিক্রি করতে আসা ইদ্রিস আলী জানান, ‘আজ ১০ মণ ধান হাটে আনছিলাম। কিন্তু, বাজারে আড়তদাররা গত সপ্তাহের তুলনায় ১৩০ টাকা কম কয়। এমন আচমকা ধানের দাম কমে য্যাবে, ধারনাই করিনি। এখন নানা দুশ্চিন্তায় আছি।’
ছায়তনতলী বাজারের ধানের আড়তদার মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের মজুত বিরোধী অভিযান শুরুর পর মিল-মালিকরা ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ গাড়ি ধান কিনতেন, এখন সেখানে এক থেকে দুই গাড়ি ধান কিনছেন। আমার দুজন মহাজনের জন্য আগে সপ্তাহে প্রায় তিন হাজার মণ ধান কিনতাম। এখন সেখানে এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ ধান কিনছি। গুদামে বেশি ধান পেলে যে কোনো সময় ম্যাজিস্ট্রেট এসে জরিমানা করতে পারেন।’
দেশের অন্যতম বৃহৎ বেলকন গ্রুপের চালকল। এই গ্রুপের একাধিক মিল থেকে উৎপাদিত মিনিকেট চাল সারা দেশে রজনীগন্ধা নামে বিক্রি হয়। বেলকন গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আবু ওয়াহিদ হোসেন আলাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ধানের দাম কমে যাওয়ায় চালের দাম প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কয়েক দিন আগে আমাদের প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৩০০ টাকায়। সেই চাল এখন তিন হাজার ১৫০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
‘নওগাঁ জেলা চাউল কল মালিক গ্রুপ’-এর সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টির কারণে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসার পর থেকেই ধান ও চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অভিযান শুরুর পর বাজারে ধানের দাম প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে কমেছে। পাইকারি বাজারে আজ বৃহস্পতিবার চালের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এরই মধ্যে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’