নরসিংদীতে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে-গলাকেটে হত্যা, আটক ৩
নরসিংদী সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সাবেক সদস্যকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় তাঁর ছেলেসহ আরও দুজনকে জখম করা হয়। নরসিংদীর উপশহর হাজীপুরের কাঠবাজার এলাকায় ওই ইউপি সদস্যের দোকানে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এরই মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে মাসুম সোহাগ ও শিমুল নামের তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত ইউপি সদস্যের নাম সুজিত সূত্রধর (৫৩)। তিনি হাজীপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন।
সুজিতের পরিবারের অভিযোগ, মামলা মোকদ্দমার জের ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টুর মদদে তাঁর লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ইউসুফ খান পিন্টু হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং হাজীপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। এর আগে ২০০৬ সালে হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির তৎকালীন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সরকার ও তাঁর ভাই রিপন সরকারকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে পিন্টু ও তাঁর সমর্থকেরা। জোড়া হত্যা মামলার ঘটনায় ইউসুফ খান পিন্টুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
নিহত সুজিতের ছেলে সুজন বলছেন, গতকাল সন্ধ্যার পর তাঁর বাবা সুজিত বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান। ওই সময় সুজিত তাঁর ছেলের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই মনির, সহযোগী দেলু, রাকিব ও মামুনের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী দা, ছোড়া ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সুজিতকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ওই সময় সুজিতের ছেলে ও দোকানের কর্মচারীরা তাদের বাধা দিতে এগিয়ে গেলে তাদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে সন্ত্রাসীরা সুজিতকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে। ওই সময় তাঁদের আর্তচিৎকারে কেউ এগিয়ে যায়নি। পরে সুজিতকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে এ খবর স্বজনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে।
সুজন সূত্রধর আরও অভিযোগ করেছেন, সুজিত ইউপি সদস্য থাকাকালে পরিষদের চাল ও গম বিতরণের অনিয়মসহ নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে হাজীপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টুর বিরোধ ছিল। বিরোধের জের ধরে চেয়ারম্যানের নামে একাধিক মামলা করেন সুজিত সূত্রধর। মামলার জের ধরে সুজিতের ওপর একাধিকবার হামলা করেছেন পিন্টু চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে মামলা তুলে না নিলে সুজিতকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন তিনি।
এ ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেছেন, ‘নিহত সুজিত জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। অন্যথায়, আন্দোলনে নামবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।’
এ বিষয়ে জানতে হাজীপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, পিন্টু চেয়ারম্যানের ভাই মনির খান বলছেন, ‘শত্রু কখনও শত্রুকে মারে না। বাজারে টাকা-পয়সা নিয়ে বার্নিশ মিস্ত্রিদের সঙ্গে সুজিতের ছেলে সুজনের ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে তারা সুজিতকে হত্যা করে।’
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানিয়েছেন, ঠিক কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, এ দুপক্ষের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা ছিল। হত্যার রহস্য ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।’