নামের মিলে গ্রেপ্তার, এক মাস পর মুক্তি
ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৫৫)। তিনি ২০২১ সালের নভেম্বরে ঢাকার একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার হন। কিন্তু, সে মামলার প্রকৃত আসামি নন তিনি। পুলিশের গাফিলতি আর ভুলে নামের সঙ্গে আসল আসামির মিল থাকায় নিরপরাধ জাহাঙ্গীরকে এক মাস কারাগারে থাকতে হয়।
অবশেষে আজ বুধবার ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফাতেমা ফেরদৌস জাহাঙ্গীর আলমকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. শাহ জালাল কিবরিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রকৃত আসামির নাম জাহাঙ্গীর মিয়া। কিন্তু, পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জাহাঙ্গীর আলমকে।’
সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ছিনতাইয়ের মামলায় জাহাঙ্গীর আলম পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। সে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানায় গেলে পুলিশ জাহাঙ্গীর মিয়ার পরিবর্তে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে।
বিষয়টি আইনজীবী আদালতের নজরে আনার পরে বিচারক আজ বুধবার তদন্ত কর্মকর্তাসহ হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। সে ব্যাখ্যার পরে আদালত নিরপরাধ জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেন।
জাহাঙ্গীর আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ সঠিক আসামি যাচাই-বাছাই না করেই আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে। পরে আমার আইনজীবী আদালতে বললে আদালত আমার ভোটার আইডি যাচাই-বাছাই করে জামিন দেন। আজ আদালতে হাজিরা দিতে এলে আদালত আমাকে অব্যাহতি দেন।’ ‘পুলিশের ভুলের কারণে আমি এক মাস কারাগারে ছিলাম। আমি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। জীবনে কোনো অপরাধ না করেও জেলের মুখ দেখতে হলো’, যোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত আজ মৌখিকভাবে মামলা থেকে আমার আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। কোনো দিন আমার আসামি কারাগারে যাননি। পুলিশের ভুলের কারণে নিরপরাধ ব্যক্তি এক মাস জেল খাটলেন। তিনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
আইনজীবী বলেন, ‘আজ আদালতে শুনানিতে বলেছি, জাহাঙ্গীর আলম যেন এ মামলায় আর কোনো হয়রানির শিকার না হন, তাই প্রকৃত আসামির পাশে ভোটার আইডি নাম্বার দিয়ে রাখতে। তাহলে ভবিষ্যতে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে গেলে নিশ্চিত হবে, আসল আসামি কে।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি এ মামলায় প্রকৃত আসামি জাহাঙ্গীর মিয়ার কারাদণ্ড হয়, তখন আমার আসামি আবার হয়রানির শিকার হতে পারে। তাই আদালতকে বলেছি, প্রকৃত আসামির ভোটার আইডিসহ যেন ভবিষ্যতে ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়।’
মামলার এজাহারে বলা আছে, “বাদী মো. এনায়েত উল্লাহ রাজধানীর বনানীতে তাঁর বন্ধু সেলিম মিয়ার কাছ থেকে চার লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন। ধারের টাকা পরিশোধ করার জন্য ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা হন বাদী। তিনি গুলিস্তানে যাওয়ার পরে রিকশায় থাকা অবস্থায় অপরিচিত এক ব্যক্তি পেছন থেকে ডাক দেন। সে সময় ওই অপরিচিত ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই কেমন আছেন?’ এই বলতে বলতে পাশ থেকে তিন জন লোক আমাকে ঘিরে ধরে। তখন তারা জোরপূর্বক ভয় দেখিয়ে, আমার কাছ থেকে চার লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। সে সময় আমি চিৎকার করলে আসামি জাহাঙ্গীর মিয়াকে ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। তবে, বাকিরা পালিয়ে যায়।’
এ ঘটনার পরে বাদী রাজধানীর বংশাল থানায় দণ্ডবিধির ৩৯২ ও ৩৪ ধারায় মামলা করেন। এরপর গত বছরের ৩১ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর মিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলাটি ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এ ছাড়া এ মামলায় জাহাঙ্গীর মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।