নারী কর্মকর্তাকে এলাকাছাড়া করার হুমকির অভিযোগ সাংসদের বিরুদ্ধে

পাবনায় নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে দেরি হওয়ায় সংরক্ষিত আসনের (পাবনা-সিরাজগঞ্জ) নারী সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি জেলার শিশু ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. কানিজ আইরিন জাহানকে থাপ্পড় দিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া মাত্র ১০ মিনিটে তাকে পাবনা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই নারী কর্মকর্তা।
আজ মঙ্গলবার সকালে পাবনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব নারী দিবসের আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্যে জেলার সব কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও নারী নেতৃবৃন্দের সামনে জেলা শিশু মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. কানিজ আইরিন জাহান এই অভিযোগ করেন। এর আগে গতকাল সোমবার সংসদ সদস্য ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার ফোনালাপের অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘আমার মোবাইল থেকে কাউকে কল করা হয়নি। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কণ্ঠ বিকৃত করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. কানিজ আইরিন জাহান। এর আগে কানিজ আইরিন ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপির কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলিকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে আমন্ত্রণপত্র দিতে একটু দেরি হয়। সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন চিঠি কেন পাননি জানতে চেয়ে, সোমবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার রেখা আমাকে ফোন করে জানতে চান। আমি তাঁকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে জানাই। এ সময় সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি ফোন নিয়ে আমাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে, আমাকে থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করবেন বলে ধমক দেন। আমাকে দুর্নীতিবাজ বলে গালি দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে পাবনা থেকে তাড়াতে পারেন বলেও জানান।’
কানিজ ফাতেমা আরও বলেন, ‘আমার কাজে অনিয়ম, ভুলত্রুটি পেলে তিনি বকা দিতে পারেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু থাপ্পড় দেওয়ার কথা বলতে পারেন না। আমার বাবা-মাও কখনো আমাকে থাপ্পড় দেননি। অথচ নারী দিবসে আমাকে এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো। আমি এখানে সরকারের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, নারী দিবসের দিনে থাপ্পড় খেতে নয়। ঘটনার পর থেকে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে মঙ্গলবার পাবনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘আমি নিজে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দুইবার ফোন দিয়েছি। তিনি ধরেননি। তাই থাপ্পড় দেওয়ার কথা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই নারী কর্মকর্তা একজন ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ। তার নানা অপকর্মের কারণে প্রধানমন্ত্রীর গৃহিত কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। আমার মোবাইল থেকে কাউকে কল করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমার কণ্ঠ বিকৃত করা হয়েছে।’
সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দুর্নীতিপরায়ণ, স্বেচ্ছাচারী। মহিলা সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। নারী সমাজের প্রতিনিধিকে অপমান, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য করে তিনি সমগ্র নারী জাতির অবমাননা করেছেন।’
থাপ্পড় দিতে চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জলি বলেন, ‘উনি একজন প্রোগ্রাম অফিসার, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জেলায় দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। আমি তাঁকে সংশোধন হতে বার বার বলেছি। কিন্তু তাঁর অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরও তিনি আমার ফোন ধরেননি। পরে অন্য ফোন রিসিভ করায় আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করব।’
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সভায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’