নীলাকাশের নিচে শরতের শুভ্রতা
শরৎ মানেই নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, সবুজ প্রকৃতি, থেকে থেকে বৃষ্টি, পুরো এলাকাটাই একটা আলাদা উৎসবের ছোঁয়া পায়। কেউ বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবার কেউ একাই এই দৃষ্টিনন্দন কাশফুলের বাগানে ঘুরতে যায়।
এদিকে, মানিকগঞ্জে শরৎ এলেই মাঠে-প্রান্তরে, নদী বা বিলের ধারে সাদা মেঘের ভেলা যেন নেমে আসে জমির কোল ঘেঁষে। সেইসঙ্গে একাকার হয়ে যায় কাশফুলের বাগান। গন্ধহীন তবু এ ফুল সবাইকে টানে। তাইতো সকাল বা বিকেলে নয়, ভর দুপুরেও কাশফুলের স্নিগ্ধ স্পর্শের লোভটা অনেকেই সামলাতে পারে না। ছুটে যায় নদীর তীরে বা অন্য কোথাও।
আমাদের এই ষড়ঋতুর দেশে দুই মাস পর পরই ঋতুর পরিবর্তন হয়। ঋতু পরিবর্তনে এখন চলছে শরৎকাল। আর প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরতের আগমনী বার্তা। প্রকৃতির পালা বদলের খেলা এখন চলছে শরতের মাঝামাঝি সময়। শরতের বিকেলে নীল আকাশের নিচে দোল খায় শুভ্র কাশফুল।
প্রতি বছরের মতো এবারও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা কাশফুলে ছেয়ে গেছে। তবে এবারের বন্যায় নদীর তীর ঘেঁষে কাশফুল নীল আকাশের নিচে খুব বেশি দোল খেতে দেখা যাচ্ছে না। তবুও দিনের একটু অবসরে, প্রাণের টানে দর্শনার্থীরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কাশফুলের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে ছুটে বেড়াচ্ছে।
প্রকৃতিপ্রেমী এক দর্শনার্থী দীপক কুমার ঘোষ। যিনি প্রায়ই ঘুরতে যান নদীর তীরে। রোদ, বৃষ্টি ও মেঘের সঙ্গে কাশবনের একাকার হয়ে যাওয়া উপভোগ করা তাঁর এক প্রকারের নেশা। তাই তো তিনি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘শরৎ মানেই এক ধরনের আন্দোলিত হওয়া, শরৎ মানেই প্রেমকে জাগিয়ে তোলা আর এই প্রেমকে জাগিয়েই তোলে কাশফুল। কাশফুলের ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসের মতো প্রেম হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়।’ তিনি আর বলেন, ‘যদিও বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়, তবুও শরৎ-ই আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। কারণ শরতের মধ্যে এক ধরনের মাদকতা কাজ করে। নীলাকাশ, সাদা সাদা মেঘ সবকিছুর মাঝেই একটা শীতলতা দেখতে পাওয়া যায়। আর এই কাশফুলই হলো সব অপূর্ণের পূর্ণতার শেষ সীমা।’
নদীর ধারে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী শোনালেন তাঁর মনের ভাষা। পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছেন কিন্তু বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার মতো এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তিনি আর কোথাও দেখতে পাননি। তিনি বলেন, ‘পরিবারের অন্য সদস্যদের ছেড়ে গত ছয় বছর ধরে এ অঞ্চলের বিশেষ করে কাশফুলকে ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসের খেলা দেখি। এই উপভোগটা আরো মধুর হতো যদি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উপভোগ করতে পারতাম।’
প্রকৃতি যে কত সুন্দর, তা কাছে না গেলে বোঝা যাবে না। শরতের বিকেলটাই সেই ইঙ্গিতের জানান দেয় বলে জানালেন এক চিকিৎসক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, ‘জীবনকে উপভোগ করতে হলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতেই হবে। যেখানে গেলে বিষন্ন মন ভালো হবেই। আমি মনে করি শরতের এই কাশফুলের সৌন্দর্য যেকোনো দর্শনার্থীর মনকে ভালো করে দেবে, মনকে দোলায়িত করবে।’
শরতের কাশফুল উপভোগে কোনো বিশেষ শ্রেণি নয় বরং নানান পেশার নানান জন ঘুরতে বের হয়। ছুঁয়ে দেখতে চায়, চায় হারিয়ে যেতে কাশবনের শুভ্রতায়। খানিকটা সুখ অথবা উঁকি দিয়ে দেখতে চায় সূর্যের আলোক ছটা। অনেকে আবার ভালোবেসে লোভ সামলাতে না পেরে ছিঁড়ে নেয় নিজের করে। কেউবা মুহূর্তটুকু ধরে রাখে সেলফোনে। নতুন সূর্যোদয়ের খোঁজে আমরা হারিয়ে যাই কাশবনের গহীন অরণ্যের পড়ন্ত বিকেলে।