ন্যায়বিচার পাইনি, উচ্চ আদালতে যাব : মিন্নির বাবা

বরগুনার মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ (২৬) হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। খালাস পেয়েছেন চারজন। বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান আজ বুধবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এটি প্রহসনের রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
মিন্নির বাবা বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে আমার মেয়ে খালাস পেত। আমি আশা করি, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব।’
এদিকে রায়ের বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালত একটি রায় দিয়েছেন। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি, আমরা সংক্ষুব্ধ। মিন্নি ন্যায়বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
এর আগে আজ রায় ঘোষণার পর মিন্নিসহ ছয় আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে তিনজন আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। খালাস পাওয়া আরেক আসামি মো. মুসা আগে থেকেই পলাতক ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)। আসামিদের মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে মিন্নিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে বরগুনা আদালত এলাকায় সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি শহরজুড়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর আগে মামলার অন্যতম আসামি ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি আজ সকাল পৌনে ৯টার দিকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মোটরসাইকেলে চড়ে আদালতে হাজির হন। এ সময় মিন্নি সাদা থ্রিপিস পরা ছিলেন। দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মিন্নির মুখে ছিল সাদা মাস্ক। তবে তাঁর বাবার মুখে মাস্ক ছিল না। বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকে বরগুনা কারাগার থেকে বের করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়।
আদালত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বরগুনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হারুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রায়কে ঘিরে আদালত এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতের সামনে সাতটি স্তরে এবং আদালতের বাইরে চার প্লাটুন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া শহরজুড়ে প্রতিটি সংস্থার লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন।’
বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রায় নিয়ে পুরো বরগুনা শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
গত বছরের ২৬ জুন প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। মামলার প্রধান আসামি মো. সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়নবন্ড গত বছরের ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অন্য একজন আসামি মো. মুসা আগে থেকেই পলাতক।
এ মামলায় মোট ৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন বরগুনার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ভুবন চন্দ্র হালদার। সঙ্গে ছিলেন প্যানেলভুক্ত আইনজীবী এ এম মুজিবুল হক কিসলু ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। আসামিদের পক্ষে ছিলেন মো. মাহবুবুল বারী আসলাম, মো. শাহজাহান মিয়া, হুমায়ুন কবীর, অলি উল্ল্যাহ সবুজ ও আবদুর রহমান নান্টু।