নড়াইলে আ.লীগনেতার বিরুদ্ধে বিধবার বাড়ি দখলের অভিযোগ
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন আলম ওরফে কাহার আলমের বিরুদ্ধে বিধবার বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শাহাবাদ ইউনিয়নে হয়েছে মানববন্ধন। ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শাহাবাদ ইউনিয়ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন থেকে তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ।
গতকাল শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের পর সন্ধ্যায় স্থানীয় গারোচোরা বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ একই অভিযোগে প্রতিবাদ সভা করেছে।
পৃথক এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন শাহবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া, ভুক্তভোগী নারী জেসমিন নাহার, নড়াইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুজ্জামান পলাশ প্রমুখ।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের মোজাহার হোসেন নড়াইল সদর হাসপাতালের পূর্ব পাশে ৮ শতাংশ জায়গায় একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে প্রথম স্ত্রী নাসিমা বেগমকে নিয়ে বসবাস করতেন।
২০০৭ সালে জেসমিন নাহার নামে এক মেয়েকে বিয়ে করলে প্রথম স্ত্রী নাসিমা কন্যা সুমিকে নিয়ে তাঁর বাবার বাড়ি রাঙামাটি জেলায় চলে যান। এদিকে ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর মোজাহারের মৃত্যু হয়। সে পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন জেসমিন। তাঁদের মৌসুফ আহম্মেদ (১২) নামে এক সন্তান রয়েছে।
আজ রোববার সদরের আলোকদিয়া গ্রামে মোজাহারের পৈত্রিক ভিটায় জেসমিন নাহারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় নাড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছেলের ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল আনতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর বাড়িতে কে বা কারা তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এ সময় তিনি বাড়িতে এসে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করেন। ওই দিন বিকেলে আওয়ামী লীগনেতা আলমের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন এসে তাঁকে মারধর করে এবং ছেলের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৫০ হাজার টাকা, দুই ভরি স্বর্ণসহ দুই লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
কথা বলে আরও জানা যায়, এরপর চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তারা পুনরায় তার বাড়িতে এসে মালামাল লুটপাট এবং জানালা দরজা ভেঙে ফেলে এবং মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
জেসমিন নাহার বলেন, ‘এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং আলোকদিয়া গ্রামে স্বামীর পৈত্রিক ভিটায় বসবাস করছি। সন্তানকে স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছি।’
জেসমিন সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘তাঁরা যেন এ ঘটনার সঠিক বিচার এবং আমার বাড়ি দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা করে দেন।’
জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একজন বিধবা গৃহবধূকে এভাবে মারধর ও লুটপাট করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া ফৌজদারি অপরাধের শামিল। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের নামে আলমগীর হোসেনের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মী মারধর ও লাঞ্ছিত হয়েছেন।’
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সে কীভাবে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ওয়ারিশ সনদ নেয়?’
শাহবাদ ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমি শাহবাদ ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে কাজ করার সময় সরদার আলমগীর হোসেন দলবল নিয়ে সেখানে আসেন। তারপর অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রথমে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এরপর মৃত মোজাহের হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তান মৌসুফ আহম্মেদকে ওয়ারিশ সনদ থেকে নাম বাদ দিয়ে প্রথম স্ত্রী নাসিমা বেগম ও তাঁর মেয়ে আসমা সুলতানা সুমিকে ওয়ারিশ হিসেবে দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ স্বাক্ষর করিয়ে নেন।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে আমি এর উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার দাবি করছি। জোরপূর্বক স্বাক্ষর করা ওয়ারিশ সনদপত্র উদ্ধারের দাবি করছি। এ বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ ব্যাপরে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষ শাহাবাদ ইউনিয়নের মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে আমি মোজাহারের প্রথম স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামের ৩ শতাংশ জমি কিনেছি। আমি কাউকে মারধর করিনি। ওই তিন শতাংশ জায়গার মধ্যে বাড়ির অংশ পড়েছে। এ বিষয়ে আমি ওয়ারিশ কায়েম সনদপত্রের জন্য শাহবাদ ইউনিয়ন পরিষদেও গিয়েছি।’
আলমগীর হোসেন আলমের দাবি, তিনি বাড়িটি কিনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবং থানা পুলিশকে জানিয়েছেন। পরে নড়াইল জজ আদালতে মামলাও করেছেন। মামলাটি এখন সিআইডির তদন্তাধীন।