পরিশুদ্ধ হওয়ার নাটক করে লাভ নেই : মির্জা ফখরুল

ছবি : এনটিভি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পরিশুদ্ধ হওয়ার নাটক করে লাভ নেই। দেশের মানুষ জানে, কারা আসল লুটপাটকারী। কার ইঙ্গিতে এসব অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে। সে কারণে চুনোপুঁটি ধরে কোনো লাভ হবে না।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
বর্তমান সরকার মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জোরজবরদস্তি করে আর ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। পৃথিবীর কোনো দেশে জোর করে কারো ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার নজির নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সচেতনভাবেই এ সরকার দেশের ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আজ তারা কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনছে। মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডে বাড়িঘর করছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাইরে না থাকায় দেশে আজ স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজ নেই বলে ফেনী নদীর পানি অবলীলায় চলে যায়। কিন্তু তিস্তা নদীর পানি আমরা পাই না। তিনি নেই বলে ভারতের রাডার বসানো হয়। কিন্তু এটা দিয়ে কী হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। তিনি নেই বলেই এলএনজি আমদানি করে প্রতিবেশী দেশে রপ্তানি করার আমরা সিদ্ধান্ত নেই। তিনি নেই বলেই আজ আমার দেশের স্বাধীনতা নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, কেউ কোনো কথা বলতে পারে না।
তরিকুল ইসলামের স্মৃতিচারণা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম একজন। তিনি সারা দেশের মানুষের কাছে একজন বরেণ্য নেতা। তরিকুল ভাইয়ের জানাজায় আমি আসতে পারিনি। উনার কবরে মাটি দিতে পারিনি। এটা আমার সারা জীবনের দুঃখ। আমরা এক সাথেই রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করেছিলাম। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, একটা সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা তরিকুল ইসলামের সহযোগী ছিলাম। আমি মধ্যে দিয়ে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে ছিলাম। কিন্তু তিনি সারাটা জীবন রাজনীতির মধ্যে ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। যার সবকিছুতেই ছিল রাজনীতি। সত্যিকার অর্থে একজন অনুকরণীয় নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি অকুতোভয়ে সত্যা কথা বলতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কখনোই দ্বিধায় ছিলেন না। কিন্তু শেষ বয়সে অসুস্থ শরীরে এসে তাঁকে বিভিন্ন মামলার হাজিরা দিতে যশোর-ঢাকা-যশোর ছোটাছুটি করতে হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একজনের মৃত্যুর স্মরণ সভা করতে এসে আরেকজনের মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম। আমাদের আরেক সহযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মারা গেছেন। এ যেন এক মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। এই সরকার আসার পর থেকে বিগত ১২ বছরে অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নে আমাদের একেকজন প্রজ্ঞাবান নেতা চলে যাচ্ছেন। এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের পথ অনুসরণ করে আগামীর সূর্যকে উঠতে দেখতে হবে।
খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় আমাদের নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সারা দেশে এই আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের ফলে ২৬ লাখ মানুষ আসামি। পাঁচশর ওপরে আমাদের নেতাকর্মী গুম হয়েছে। সেই নির্যাতনের কথা তো আমরা ভুলতে পারি না। এই একটা ভয়াবহ দুঃশাসনের পাথর আমাদের ওপর চেপে বসেছে। এই পাথরকে আমাদেরই সরাতে হবে। অন্য কেউ এসে এটা সরিয়ে দেবে না। বাংলাদেশের মানুষকেই এবং বিএনপিকেই এই পাথরকে সরাতে হবে। আমরা একটা কথা আজ পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। সেটি পৃথিবীর কোনো রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। জবরদস্তি আর বন্দুকের নল দিয়ে টিকে থাকা যায় না। এই দেশের মানুষের মন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ দোয়া করছেন কবে এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আর পেছনে দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই।
বিএনপিকে খোলা মাঠে প্রোগ্রাম করতে দিতে সরকার ভয় পায় উল্লেখ করে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এ নেতা বলেন, আজকে তরিকুল ইসলাম ভাইয়ের স্মরণসভা করা জন্য মাঠে অনুমতি দেওয়া হয়নি। একটা আবদ্ধ ঘরে আমাদের প্রোগ্রাম করতে হচ্ছে। তার পরও হাজার হাজার মানুষ এখানে এসেছেন। তারা মাঠে প্রোগ্রাম করতে দেয় না। কারণ তারা আমাদের ভয় পায়। বিএনপিকে ভয় পায়। তারা জানে এই মানুষগুলো যদি একবার জেগে উঠে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণ আমাদের পাশে আছে। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি করতে হবে জনগণ আমাদের যেভাবে চায় সেভাবে তাদের পাশে পাই কি না। যদি না পায় তাহলে আমাদের জনগণের পাশে থাকার সেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। শহীদ জিয়ার ডাকে জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তখনো কিন্তু আদালত ছিল সুতরাং ওই যে আদালত যে তখন ৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল মানল না তার জন্য আদালত কিন্তু ইয়াহিয়া খানকে বলে নাই এটা বেআইনি, ক্ষমতা হস্তান্তর করো। সুতরাং আজকের আদালত আদালতের জায়গায় নেই। আজকের আদালত প্রধানমন্ত্রীর কব্জার মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে কারো মুক্তি হয়। না চাইলে মুক্তি হয় না।
পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার তাদের নিজেদের ক্ষমতা টিকানোর জন্য ৩০ তারিখের নির্বাচন ২৯ তারিখ রাতেই সম্পন্ন করে ফেলেছে। আজ আমরা আসার পর পুলিশ প্রশাসন আমাদের দূরবীণ দিয়ে দেখছে। একটা সময় আসবে জনগণ তাদের দূরবীণ দিয়ে দেখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্পষ্টবাদী হওয়া একজন রাজনীতিবিদের জন্য খুব কঠিন। কারণ একজন রাজনীতিবীদ স্পষ্টবাদী হলে তার শত্রু বাড়ে। তবে তিনি এসবের তোয়াক্কা করেতেন না। মরহুম তরিকুল ইসলাম এই গুণের অধিকারী ছিলেন। এর চাইতে বড় গুণ মানুষের হতে পারে না। মানসিকভাবে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে হলে বিত্তের দুর্বৃত্তায়নমূলক রাজনীতি পরিহার করে তরিকুল ইসলামের পথে হাঁটতে হবে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামপত্নী নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু ও নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেহেদি হাসান রুমি, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল, আবুল কালাম আজাদ, শাহারুজ্জামান মোর্তজাসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নেতারা।
স্মরণসভার আগে দুপুর ১২টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা যশোর কারবালায় তরিকুল ইসলামের কবর জিয়ারত করেন এবং দুস্থদের মধ্যে খাবার ও পবিত্র কোরআন শরিফ বিতরণ করেন।