পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা, সমন জারি
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/03/24/pabna.jpg)
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক এম রুস্তম আলীর নামে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রক্টর ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ড. আওয়াল কবির জয়। আজ বৃহস্পতিবার তিনি পাবনার আমলি আদালত-১ এ স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারা মোতাবেক মামলাটি করেন।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী সুলতানা রাজিয়া টুলটুলি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাদীর আরজি সূত্রে জানা যায়, আসামি অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী, পিতা মৃত মাবুদ আলী (বর্তমান ঠিকানা, অধ্যাপক, ফলিত রসায়ন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ড. আওয়াল কবির জয়কে রেজিস্ট্রার কর্তৃক চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর পরে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্ত কমিটির নামে নানাভাবে হয়রানি করেন এবং দীর্ঘসময় তার রিপোর্ট প্রদান না করে উপাচার্যের মেয়াদ শেষের আগে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান। এতে ড. আওয়াল কবির জয়ের সামাজিক, ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক সম্মানহানি হয়েছে এবং তিনি সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ওই ধরনের মানহানি ঘটায় উপাচার্য রুস্তম আলী ড. আওয়াল কবির জয়ের ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি করে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় গুরুতর অপরাধ করেছেন।
আসামি এতকাল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আসীন থাকায় বাদীর গুরুতর ক্ষতি করতে পারে বিধায় মামলা করতে বিলম্ব হয়। শুনানি শেষে আদালত মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।
উল্লেখ্য, রুস্তম আলী উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেই নানা অনিয়ম-দুর্নীর্তি এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। নিয়োগবাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার, একাডেমিক-প্রশাসনিক আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ইউজিসির তদন্তে নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তিনি অনেক টাকা ফেরত দেন। তার অদক্ষতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ মেয়াদ শেষ হয় তার। মেয়াদ শেষের আগে গণনিয়োগ আয়োজন করেন এবং রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে সভা বাতিল করে পুলিশ পাহারায় রাতের অন্ধকারে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন। অনৈতিকভাবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন নিজের ভাতিজি কানিছ ফাতিমা (সেকশন অফিসার), ভাগিনা হাসিবুর রহমান (অফিস সহকারী), ভাইয়ের ভায়রার ছেলে মীর রমজান আলী (টেকনিশিয়ান), নাতি ফজলুল হক (মেসেঞ্জার), ভাতিজা নূর মোহাম্মদ (অফিস সহকারী), নাতি হাসান উৎসব (অফিস সহায়ক), ভাগনে ছানোয়ার হোসেন (ল্যাব এটেনডেন্ট), নাতি আসিকুর রহমানকে ( বাস হেলপার)।
রুস্তম আলীর নিয়োগ বাণিজ্য ও গণনিয়োগ বন্ধ করতে শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে, ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং বিদায়বেলা ঝাড় ও জুতামিছিল করে। রুস্তম আলীর অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদ এবং নানা দাবিতে গত প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে কর্মকর্তারা। বর্তমানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সৃষ্টি হয়েছে নানা সংকট।
মামলার বাদী শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আওয়াল কবির জয় বলেন, ‘উপাচার্য রোস্তম আলী ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া সব অভিযোগ তুলে আমাকে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ঢুকতে দেননি এবং কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বিরত রেখে আমার ব্যক্তিগত, চাকরি ও সামাজিক ক্ষতি করেছেন। আশা করি আদালতে ন্যায়বিচার পাব।’
অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী সুলতানা রাজিয়া টুলটুলি মামলা রেকর্ড হওয়া এবং আদালত কর্তৃক সমন জারির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উভয় আইনজীবী বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি মক্কেল ন্যায়বিচার পাবেন।’
এ বিষয়ে জানতে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এম রুস্তম আলীকে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।