প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সন্ধ্যায় শপথ নিচ্ছেন ড. শামসুল আলম
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সাবেক সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ রোববার এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শামসুল আলমকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের ফাইল গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গত শুক্রবার শামসুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত ফাইল সই করেছেন। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শপথ নেওয়ার জন্য আমাকে বঙ্গভবনে যেতে বলা হয়েছে।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমি মনে করি এটা আমার গত ১২ বছরের কাজের স্বীকৃতি। আমি যেভাবে ১২ বছর ধরে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, নিয়োগ পেলে সেভাবেই করে যাব।’
দায়িত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল আলম আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জেনেছি।
ড. শামসুল আলমের জন্ম চাঁদপুরে মতলব উত্তর উপজেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি।
ড. আলম এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি, ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতায় ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপনা জীবনে ড. আলম ২০০৮ সালে জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্কট্ ফ্যাকাল্টি হিসেবে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন।
ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পরপর তৃতীয় মেয়াদে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্টস বোর্ডে (চতুর্থ মেয়াদ), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে (চতুর্থ মেয়াদ), সিলেট বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে (তৃতীয় মেয়াদে) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের (দ্বিতীয় মেয়াদে) সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এর গভর্নিং বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় মার্চ ২০০২ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫ পর্যন্ত পূর্ণকালীন চাকুরিরত ছিলেন। তিনি ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে উপসম্পাদকীয় পাতায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী অসংখ্য কলাম লিখেছেন।
পঁয়ত্রিশ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা শেষে ড. শামসুল আলম ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।
ড. আলমের কর্মজীবন ২০১৮ সালে ৪৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সৃষ্টির পর সদস্য হিসেবে ২০০৯ থেকে ড. আলম দীর্ঘতম সময়ের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন। ড. আলম ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। তিনি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিব্যবসায় ও বিপণন বিভাগে দীর্ঘ ৩৫ বছর অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন।
এ ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদানের আগে অধ্যাপক আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনে তাঁর প্রথম দায়িত্বের মধ্যে ছিল দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১) সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে সংশোধন পুনর্বিন্যাস করা। সংশোধিত সে দলিল ‘দিন বদলের পদক্ষেপ’ জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়ে ২০১০-১১ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১), ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) ড. আলমের নেতৃত্বে ও অংশগ্রহণে প্রণীত হয়। ড. আলমের নেতৃত্বে প্রণীত বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক (২০১৬-২০২০) পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। পরিকল্পনা কমিশনে ড. আলমের কার্যকালীন সময়ে অন্য সবের মধ্যে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিষয়ক ১৬টি গ্রন্থ, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২০২১) এবং বাংলাদেশের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র (২০১৫-২০২৫) প্রণীত হয়েছে। ড. আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণীত হয়েছে (২০১৮)। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে কার্যকালীন সময়ে তাঁর তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় এ পর্যন্ত ৮২টি মূল্যায়ন প্রতিবেদন, অধ্যয়ন ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
ড. শামসুল আলম ২০১৮ সালে South Asian Network for Economic Modelling থেকে বাংলাদেশে ‘Economist of Influence Award’ অর্জন করেন। ড. আলমের গবেষণাগ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি। দেশে-বিদেশে প্রকাশিত সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ২০টি। দেশ-বিদেশে প্রকাশিত জার্নালে তাঁর গবেষণা নিবন্ধ অর্ধশত। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে দক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ১৬তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ২০১৮ সালে ড. আলম স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি ড. আলমকে ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিপদক ২০১৮’-তে ভূষিত করেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ২০১৮ সালে শিক্ষকতা ও গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাঁকে ‘সম্মাননা পদক’ প্রদান করে। শিক্ষকতায় সাফল্য ও বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদ্যাপন কমিটি ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর ড. আলমকে ‘বিশেষ সম্মাননা স্মারক’ প্রদান করে।
সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সরকারি দায়িত্ব পালনে ড. আলম বিশ্বের ৪৮টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ড. শামসুল আলম সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত নয় বার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগদান করেছেন। তিনি ২০১১ সালের ৭-১১ মে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে এবং ২০১৬ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি জাপান সফরে সফরসঙ্গী ছিলেন। ড. আলমের পারিবারিক জীবনে স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান এবং এক নাতনি রয়েছে।