প্রবীণ সাংবাদিক এম এ ওয়াহেদ তারা মিঞা আর নেই
মানিকগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক এম এ ওয়াহেদ তারা মিঞা আর নেই। গতকাল রোববার বিকেল ৪টায় মানিকগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বদাশড়াস্থ তিনি নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, চার মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাদ মাগরিব মানিকগঞ্জ দরবার শরিফে প্রথম জানাজা হয়। পরবর্তী সময়ে মরহুমের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-নালোড়া গ্রামের মসজিদ প্রাঙ্গণে বাদ এশা দ্বিতীয় জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সাংবাদিক এম এ ওয়াহেদ তারা মিঞা ১৯৪০ সালের ১৮ জুলাই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-নালোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে মানিকগঞ্জ ভিক্টোরিয়া স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬০ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
তারা মিঞার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম, সাবেক মেয়র মো. রমজান আলী, মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুদেব কুমার সাহা, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু এবং জেলার সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
শোক প্রকাশে তাঁরা জানান, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এম এ ওয়াহেদ তারা মিঞার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি সমাজ উন্নয়নের চেষ্টায় সারাটা জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। তাঁরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানিয়েছেন।
এম এ ওয়াহেদ তারা মিঞা ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাশের গন্ডী পেরিয়েই সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক সংবাদ, মর্নিং নিউজ এবং পাকিস্তান বাই উইকলি পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জের দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তাঁর আগে এই পেশায় আসেন খন্দকার মঞ্জুরুল হাসান শেলী।
তারা মিঞা ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি মানিকগঞ্জ মহকুমা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মরহুম তারা মিঞার হাত ধরেই পরবর্তীতে মোহাম্মদ আসাদ, আব্দুল মোন্নাফ খান, জালাল উদ্দিন আহমেদ, প্রজেশ কান্তি রায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। মানিকগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ রফিক সড়কে ‘মানিকগঞ্জ রেডিও হাউজ’ নামের প্রতিষ্ঠানেই সাংবাদিকরা বসতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সমাজ উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ১৯৬১ সালে স্থাপিত বেতিলা হাই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। স্কুলটিতে পরবর্তীতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
তারা মিঞা ২০০২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে জাতীয় পর্যায়ে ২০১২ সালে ‘আজীবন সেবা স্বীকৃতি সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও তিনি মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ জেলা কেন্দ্রীয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি, মানিকগঞ্জ ইউসিডি প্রজেক্ট কাউন্সিলের পরিচালক, মানিকগঞ্জ নাগরিক কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি, শহর সমাজসেবা প্রকল্প সমন্বয় পরিষদের প্রচার ও গণসংযোগ প্রযোজক, বেতিলা পল্লী সেবক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও মানিকগঞ্জ রোগী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে গেছেন।