প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে : ওবায়দুল কাদের
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/11/oka-photo.jpg)
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বড় বড় কথা বলছেন। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, কারা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। খোঁজ নেওয়া হবে, প্রশাসনে কারা দুর্নীতিবাজ। সব সেক্টরে খারাপ লোকদের খুঁজে বের করা হবে।’
আজ সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। সৎ সাহস আছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রমাণ করেছেন। নিজের দল থেকে শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করেছেন। কেউ ছাড় পাবে না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর যে সুনাম, অর্জন, পরিশ্রম, তাঁর যে ত্যাগ, বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। এখনো বুলেট তাঁর পেছনে তাড়া করে। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও আছেন এক ঝুঁকিপূর্ণ পথচলায়। শেখ হাসিনার কর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, সততা নিয়ে, সাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা হাতে এগিয়ে যাই, কোনো শক্তি আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না।’
‘আওয়ামী লীগে দূষিত রক্ত আর চাই না’
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের পার্টিতে দূষিত রক্ত আর চাই না। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘কে কত প্রভাবশালী, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা চাইব, ক্লিন ইমেজের কর্মীদের নেতা বানাতে। খারাপ লোকের কোনো দরকার নেই। খারাপ লোকরা দলের দুর্নাম ডেকে আনে। দুঃসময় আসলে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুতরাং যাদের সাহস আছে, কেয়ার আছে, যাদের ক্লিন ইমেজ আছে, আমি আশা করি, আজকের ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের সম্মেলন থেকে ক্লিন ইমেজের দ্বার উদঘাটনের সেই সূচনা হবে। যাদের ভালো ইমেজ, তাদের দিয়েই কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নেতৃত্ব সৃষ্টি করা হবে।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও অন্যের বাড়ি দখলকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার মেসেজ, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই মেসেজ আমি সম্মেলনের নেতাকর্মীদের কাছে দিয়ে গেলাম।’ এ সময় নেতাকর্মীরা সমস্বরে এ সব থেকে দূরে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মনে রাখবেন, সোনালি সব অর্জন, এত অর্জন, এই অর্জন খারাপ আচরণের কারণে যাতে ম্লান হয়ে না যায়। দশটা ভালো কাজকে একটা খারাপ ব্যবহার ঢেকে দিতে পারে, মলিন করে দিতে পারে। দশটা ভালো অর্জন একটা খারাপ কাজের জন্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীরা, লুটেরা, সন্ত্রাসীরা দুর্নীতিবাজরা সাবধান। আওয়ামী লীগে এদের ঠাঁই হবে না। মনে রাখবেন, ক্ষমতা চিরদিন থাকে না। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না। বসন্তের কোকিলদের এনে দল ভারী করার চেষ্টা করবেন না। আমরা দুঃসময়ের কর্মী চাই, বসন্তের কোকিল চাই না।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মহানগর দক্ষিণের সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু। উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ ও সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।
২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান ইরান। দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, তারিক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমবায় সম্পাদক এইচ এম কামরুল হাসান আইয়ুব।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পান্না ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল।
সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি দেওয়া হয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকেও।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সম্মেলনের একদিন পর আগামীকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির উত্তর শাখার সম্মেলন।