প্রার্থীদের লেমিনেটিং পোস্টার লাগানোর ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজ বুধবার থেকে প্রার্থীদের লেমিনেটিং পোস্টার লাগানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে লেমিনেটিং পোস্টার উৎপাদন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশন ও নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যে লেমিনেটিং পোস্টারগুলো লাগানো হয়েছে, নির্বাচনের পর তা যথাযথভাবে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আজ বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বিষয়টি নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
এ বিষয়ে আইনজীবী মনোজ কুমার বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে, নির্বাচন কমিশনের বিধিতে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধিনিষেধে ৮-এর সাতটি ধারা রয়েছে। এখানে পোস্টারের আকার, রং ও অন্যান্য বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও পোস্টারে লেমিনেটিং বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা, এমনকি আবার লেমিনেটিং করা যাবে, সেটাও বলা নেই। ফলে ইসি ও প্রার্থী উভয়পক্ষই এ আইনের সুবিধা নিতে পারছে। এসব বিষয় আদালতে উপস্থাপন করার পর আদালত এ আদেশ দেন।
আইনজীবী মনোজ কুমার আরো বলেন, প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা। বেশি সময় অক্ষত রাখতে কাগজের পোস্টার টেকসই করার লক্ষ্যে লেমিনেট করার প্রতিযোগিতা এখন রূপ পেয়েছে আভিজাত্যে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে পরিবেশদূষণকারী পণ্যটিই হয়ে উঠেছে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। পরিবেশদূষণ ঘটিয়েই তাঁরা দিয়ে যাচ্ছেন আধুনিক, উন্নত ও সুন্দর শহর গড়ার অঙ্গীকার।
নির্বাচনী আইনে পোস্টার ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধি ও পলিথিন ব্যবহার সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকার সুযোগ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। বৃষ্টি বা অন্য যেকোনো কারণে পোস্টার নষ্ট হতে পারে—এই অজুহাতে প্রায় সব নির্বাচনী পোস্টার লেমিনেটিং করা হয়েছে।
বৃষ্টির জন্য গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে পোস্টারে পলিথিন মোড়ক দেওয়া শুরু হয়। এবারও শীতের কুয়াশায় পোস্টার নষ্ট হতে পারে—এ শঙ্কায় পোস্টার লেমিনেটিং করা হয়েছে। এবার ঢাকার দুই নির্বাচনে ৭৫৮ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতি প্রার্থী গড়ে দুই হাজার পোস্টার ঝোলালেও ১৫ লাখ ১৬ হাজার পোস্টার ঢাকার রাস্তায় ঝোলার কথা। বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকার প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে অলিগলির সব রাস্তা এখন লাখ লাখ পোস্টারে ছাওয়া। একটি নির্বাচনী পোস্টারের সর্বোচ্চ পরিমাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্য ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ একটি পোস্টার দুই হাজার ৭০০ বর্গসেন্টিমিটার। যদি ধরে নেওয়া হয় প্রতি প্রার্থী মাত্র দুই হাজার পোস্টার লাগিয়ে থাকেন, তাহলেও চার কোটি নয় লাখ ৩২ হাজার বর্গমিটার পলিথিন ব্যবহার হওয়ার কথা, যার পুরোটাই অপচনশীল। এসব পলিথিন পরিবেশে দীর্ঘদিন রয়ে যাবে। আবার পোড়ালেও ভয়াবহ দূষণ হতে পারে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সামগ্রী উৎপাদন, বিক্রি ইত্যাদির ওপর বাধানিষেধ (৬)-এর ক-তে বলা হয়েছে, সব বা যেকোনো প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি অন্য কোনো সামগ্রী যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে সারা দেশে বা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে। তবে একে শুধু পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধের নীতিমালা বলছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
পলিথিন ব্যবহারের ফলে ড্রেন, নালা-নর্দমা, খালঝিল ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে অপচনশীল পলিথিন নদী, পুকুর, জলাশয়ের তলদেশে জমা হয়ে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে পানিতে থাকা প্রাণবৈচিত্র্য, যেমন মাছ বা অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্য পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মাটি, পানি, বাতাস—তিন স্তরেই প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। অপচনশীল বলে এরা মাটির উর্বরতা শক্তি মারাত্মক বিনষ্ট করে পলিথিন নালা-নর্দমা থেকে শুরু করে নদ-নদী সবস্তরেই পানির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করে। একে পুড়িয়ে ফেললেও বাতাস ভীষণভাবে দূষিত হয়। খাবারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।