বনানীতে স্ত্রীর কবরে চিরনিদ্রায় স্যার আবেদ
রাষ্ট্র এবং সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে চিরবিদায় নিলেন কিংবদন্তিতুল্য এনজিও সংগঠক-ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। আজ রোববার ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে স্ত্রী আয়েশা হাসান আবেদের কবরে দাফন করা হয়।
এর আগে আজ সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখানে আগে থেকেই ব্র্যাকের কর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে অপেক্ষায় ছিলেন। এত বেশি সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন যে সবার শ্রদ্ধা জানানো শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
প্রথমে স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর পর্যায়ক্রমে মরদেহে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ ছাড়া শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আরো অনেকে স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান এবং জানাজায় অংশ নেন।
দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা পড়ান গুলশান ইসলামিক সেন্টারের খতিব হাফেজ মাওলানা আহসানউল্লাহ। এরপর স্যার আবেদের মরদেহ দাফনের জন্য বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানাজার আগমুহূর্তে স্যার ফজলে হাসান আবেদের ছেলে শামেরান আবেদ সবার উদ্দেশে বলেন, ‘সবাই আমার বাবাকে শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা জানিয়েছেন। এ জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বাবা সারা জীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন, সবার কথা চিন্তা করেছেন, আপনারা তাঁর জন্য দোয়া করবেন। কেউ যদি তাঁর কাছে কিছু পেয়ে থাকেন, তাহলে আমাকে জানাবেন।’
জানাজা শেষে স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বের করা হয়। তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পুরো পরিবার। শামেরান আবেদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন তাঁর বোন। সে সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই কাঁদতে থাকেন।
৮৩ বছর বয়সে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মরণে আজ দুপুর ২টা থেকে মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ব্র্যাক সেন্টারে একটি শোকবই খোলা হবে। এ ছাড়া আড়ং, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী সোমবার (২৩ ডিসেম্বর থেকে) এবং সারা দেশে ব্র্যাকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে আগামী মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে। শোকবই থাকবে ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত।