বরযাত্রায় বাসের হানা, একসঙ্গে আটজনের জানাজা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/23/munshiganj_janaja_1.jpg)
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের সঙ্গে স্বাধীন পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত নয়জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে নিহত আটজনের জানাজা আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লৌহজং উপজেলার কনকসার বটতলা গ্রামের ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার পর সাতজনকে হলদিয়া ইউনিয়নের সাতঘড়িয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। বরের বোন লিজাকে তাহেরপাড়া কবরস্থান ও মাইক্রোবাস চালক বিল্লালকে শ্রীনগরে দাফন করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন কনকসার বটতলা গ্রামের বর রুবেল বেপারীর বাবা আবদুর রশিদ বেপারী (৭০), বোন লিজা (২৪), ভাগ্নি তাবাসসুম (৬), বড় ভাই সোহেল বেপারীর স্ত্রী রুনা (২৫) ও ভাইয়ের ছেলে তাহসান (৪), ভাবির ছোট বোন রেনু (১২), ফুপা কেরামত বেপারী (৭০), বরের প্রতিবেশী মফিজুল মোল্লা (৬৫) ও মাইক্রোবাস চালক বিল্লাল (৪০)।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কনের নাম নিশি। তিনি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের আবদুর রশিদের মেয়ে। কাবিনের জন্য গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে বর রুবেল ও তাঁর স্বজনরা দুটি মাইক্রোবাসে করে কনের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। দুপুর ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডে বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মাইক্রোবাসের ছয়জন। দুজন ষোলঘরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। গুরুতর আহত আছে আরো তিনজন।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
এদিকে, দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটজনের মরদেহ ছিল। কিন্তু ঢাকায় নেওয়া চারজন আহতের মধ্যে দুজন মারা যায় বলে বিকেলে জানান মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। কিন্তু সন্ধ্যায় তিনি জানান, ঢাকা নেওয়া আহত চারজনের মধ্যে দুজন নয়, একজন মারা গেছেন। তাঁর নাম রুনা (২৪)। তিনি বরের বড় ভাই সোহেলের স্ত্রী। এ ছাড়া আহত বর রুবেলের খালাত ভাই জাহাঙ্গীর মারা যাননি। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
আল্লাহ যাতে কাউকে এ রকম কষ্ট না দেন
রুবেলের চাচাত বোন জামাই আবদুর রউফ বলেন, আমার ঢাকা থেকে এই বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। বিয়ের আনন্দ একটি দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে স্তব্ধ বরের বড় ভাই সোহেল বেপারী। তিনি বলেন, আল্লাহ যাতে কাউকে এ রকম কষ্ট না দেন।
বর রুবেলের বড় ভাই সোহেলের শ্বশুর আলী নূর সরকার। দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়েছেন দুই মেয়ে ও একমাত্র নাতিকে। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘কয়দিন আগে আমার মেয়ে রেনু কলা খেতে চেয়েছিল । ওর জন্য চর থেকে দেশি কলা কিনে এনেছি। নুরজাহান খান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিকে পড়ত। সে ক্লাসে ফার্স্ট গার্ল ছিল।’
তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে পাঁচ সদ্যসের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা শাহীনকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিআরটিএর সহকারী পরিচালক।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সড়ক দুর্ঘটনার নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত নয়জনের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।