বাংলাদেশিকে ভারতীয় সাজিয়ে গ্রেপ্তার, এসআই বদলি
ঘুষের টাকা না পেয়ে ভারতীয় নাগরিক বানিয়ে এক বাংলাদেশিকে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনার পর সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়ারত হোসেনকে বদলি করা হয়েছে। আজ শনিবার তিনি নতুন কর্মস্থল পাটকেলঘাটা থানায় যোগ দিয়েছেন। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে, তিনি স্বাভাবিক বদলি হয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য প্রশান্ত কুমার হালদারসহ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, গত ১৬ এপ্রিল রাতে কালীগঞ্জ থানার এসআই জিয়ারত হোসেনসহ কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ উপজেলার ড্যামরাইল গ্রামের মনোরঞ্জন মন্ডলের বাড়িতে যান। তক্ষক বিক্রি, গাঁজা বিক্রি ও পরে জুয়া খেলার অভিযোগ এনে মনোরঞ্জন ও তাঁর ছেলে সরোজিতের হাতে হাতকড়া পরান। খবর পেয়ে মনোরঞ্জনের শ্যালক ইউপি সদস্য প্রশান্ত কুমার হালদার মোটরসাইকেলে তাদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকেও মাদক দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন এসআই জিয়ারত হোসেন। স্থানীয় লোকজনও পুলিশের হুমকিতে তাদের বাড়িতে আসতে পারেনি। একপর্যায়ে প্রশান্তর সঙ্গে থাকা দেবেন ও সুভাষ মন্ডলকে রাস্তা থেকে ধরে এনে তাদের হাতকড়া পরিয়ে মনোরঞ্জনের বাড়িতে রাখা হয়। ওই বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয় শ্যামনগরের কাঁচড়াহাটি গ্রামের কমলেশ মন্ডলকে ঘর থেকে বের করে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে পুলিশ। এ সময় মনোরঞ্জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চারজনকে ছেড়ে দিতে ইউপি সদস্য প্রশান্ত হালদারের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন এসআই জিয়ারত হোসেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ইউপি সদস্যের মোটরসাইকেলসহ সরোজিত, কমলেশ, দেবেন ও সুভাষকে থানায় নিয়ে যান এসআই। পরদিন সকালে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেলসহ তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কমলেশের স্মার্ট কার্ড নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান ও এসআই জিয়ারত আলীকে দেখালেও ২০ হাজার টাকা দিতে না পারায় কমলেশকে ভারতীয় নাগরিক বানিয়ে শনিবার মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় পুলিশ। পরে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কমলেশকে দুর্বল ধারায় অভিযোগপত্র দেবেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিয়ারত হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার কমলেশ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এর পরই এসআই জিয়ারত হোসেনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়। তবে এসআই জিয়ারত বলেন, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে নয়, বেশি দিন কালীগঞ্জ থানায় থাকায় তাঁকে স্বাভাবিক নিয়মে বদলি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শনিবার সকালে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, স্ট্যান্ড রিলিজ নয়, জিয়ারত হোসেনকে স্বাভাবিক বদলি করা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ড্যামরইলের ঘটনার তদন্ত চলছে।