বান্দরবানে পাহাড় ধস, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নাইক্ষ্যংছড়ি- আলীকদম
টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আজ বুধবারও বন্যার পানিতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী, ঘুমধুম, সোনাইছড়ি ইউনিয়নে পাহাড় ধস এবং বন্যার পানিতে সড়ক ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলাটি।
অপরদিকে, আলীকদম-চকরিয়া-লামা সড়কের শীলেরতোয়াসহ কয়েকটি স্থানে বন্যার পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় আলীকদম উপজেলার সঙ্গেও দ্বিতীয়দিনের মতো সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে, অব্যাহত ভারি বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু, মাতামুহুরী, বাকখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামা উপজেলার রুপসীপাড়াসহ আশপাশের এলাকা এবং বান্দরবান সদরের পশ্চিম বালাঘাটা, ইসলামপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়াও কোনাক খালের পানিতে ডুবে গেছে মিয়ানমার ঘুমধুমের তুমব্রু কোনাপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রও।
অপরদিকে, নদী ও খালের পানির ভেসে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের বহু ঘরবাড়িও। নদী তীরবর্তী লোকজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
বাইশারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনিমং মারমা জানান, বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বাইশারী-ঈদগা সড়কের পানেরছড়া এলাকায় সড়কের বিশাল একটি অংশ ধসে গেছে বন্যার পানিতে।
অপরদিকে, অব্যাহত বৃষ্টিতে বান্দরবান জেলা সদরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বর্ষণে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং সদর উপজেলার সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং সড়ক বিভাগের কর্মীরা পাহাড় ধসের মাটি সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে প্রশাসন এবং বান্দরবান ও লামা পৌরসভার পক্ষ থেকে।
বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আজ সকালের পর থেকে আরও বেড়েছে। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা সদরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৫ মিলিমিটার। তবে উপজেলাগুলোতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির শঙ্কাও বাড়ছে।
এদিকে, আজ বুধবার বান্দরবানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সভা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। বৃষ্টিতে উপজেলাগুলোতে পাহাড় ধসে সড়ক, ঘরবাড়ি এবং বৃষ্টিতে সড়ক ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছি।’
জেলা প্রসাশক আরও বলেন, ‘প্রাণহানি ঠেকাতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্যোগকারীদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’