মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশ সুপ্রদীপ চাকমার
মিয়ানমারের চলমান সাম্প্রতিক দাঙ্গার আগুন যেন এ দেশে না ছড়ায়, সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বান্দরবানের লামায় দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা সম্প্রদায়কে দেখতে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা এ নির্দেশনা দেন।
আজ সকালে ১১টায় উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের নতুন তংগোঝিরিপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছান। সেখানে ভুক্তভোগী এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
এ সময় সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনিতেই স্পর্শকাতর জায়গা। এর পাশে রয়েছে মিয়ানমার। সেখানে চলছে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। মিয়ানমারের চলমান সাম্প্রতিক দাঙ্গার আগুন যেন এ দেশে না ছড়ায়, সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনসহ সবর সজাগ থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সবার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করছি। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই, যে অধিকার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ছিল না আমরা মনে করি এবং দাবি করি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, লোকজনের বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া খুবই নিন্দনীয় কাজ। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের গতিপথের মধ্যে থেকে ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়াসহ উদবাস্তু ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। স্থানীয়দের জমি জবর দখল হচ্ছে, বৈধ-অবৈধভাবে জোর করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এ দেশ চলে আইনের উপর ভিত্তি করে, অধিকারের উপরে ভিত্তি করে। আপনাদের হক জমি জোর করে ছিনিয়ে কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারোর নেই। আগুনে সবকিছু পুড়ে গেলেও মন তো পুড়ে যায়নি। মনটা যেহেতু আছে নতুন করে কাগজপত্র কিনে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে সহসাই। প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে করণীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকায় প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
এ সময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর থানজামা লুসাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার, লামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রূপায়ণ দেব, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মৌজা হেডম্যান-কার্বারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র, ঢেউটিনসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বিতরণ করেন। এর আগে তিন দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপদেষ্টা বান্দরবানে পৌঁছান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রাদের তথ্যমতে, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের নতুন তংগোঝিরিপাড়ায় এসপি বাগান এলাকায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৮ পরিবারের বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। পাড়াটির নাম দেওয়া হয় তংগোঝিরি নতুনপাড়া। বড়দিনের উৎসব উপলক্ষে গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাড়াবাসী পাশের তংগোঝিরি পাড়া গির্জায় প্রার্থনায় যায়। এ সময় পাড়ায় কেউ না থাকার সুযোগে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পাড়ার ১৭টি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় গতকাল ভুক্তভোগী গুংরামনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে করা মামলায় পুলিশ জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের একজন বাঙালি এবং তিনজন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। তাঁরা হলেন সরই পূর্ব বেতছড়াপাড়ার স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০) ও মইশয় মে ত্রিপুরা (৪৮), টংঝিরিপাড়ার জোয়াটিং ত্রিপুরা (৫২) ও মো. ইব্রাহিম (৬৫)।