‘বুলবুল’ স্থল নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে, মহাবিপদ সংকেত প্রত্যাহার
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/10/bulbul-weather.jpg)
ফাইল ছবি : এনটিভি
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ক্রমশ শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর থেকে মহাবিপদ সংকেত প্রত্যাহার করে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পরিবর্তে সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর নদীবন্দরগুলো দুই নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাবে।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ঢাকাস্থ আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়াবিদ শামসুদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল স্থল নিম্নচাপ হিসেবে বাগেরহাট-পটুয়াখালী-খুলনা অঞ্চলে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে কোথাও আর মহাবিপদ সংকেত নেই। যা আছে তাহলো তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। সেটি দমকা ও ঝড়ো হাওয়া এবং মাঝেমধ্যে বৃষ্টির জন্য।’
এ ছাড়া সমুদ্রগামী মাঝ ধরার ট্রলার ও জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে বলেও জানান ওই আবহাওয়াবিদ। তিনি আরো জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।
শামসুদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রাটি আগে যে মাত্রায় ছিল এখন আর সেই মাত্রায় নেই। হয়তো কোনো স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত হলো। কিন্তু কোথাও ১০০ কিলোমিটার বা ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়ে ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যাবে- এমন আশঙ্কা আর নেই। এখন যে অবস্থায় রয়েছে তাতে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজারের সেন্টমার্টির দ্বীপে প্রায় এক হাজার ২০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন। তাঁরা এখনি ফিরতে পারবেন না বলেও জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানার পর গতকাল গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কম শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে। এটি প্রথমে আঘাত হানে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে। ঝড়টি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলার লালমোহন, চরফ্যাশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। সাতক্ষীরায় শ্যামনগরে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গোবরা ইউনিয়নের আশি ভাগ কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল থেকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলের নয় জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল হয়েছে। উপকূলের ১৪টি জেলায় প্রস্তুত ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকা প্রায় ২০ লাখ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্রে।
সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ তৎপরতা মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে বুলবুল মোকাবিলায়। নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজ এবং বিমানবাহিনীর সব এয়ারক্রাফ্ট দুর্যোগ পরবর্তী যেকোনো সেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত শুক্রবার থেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ সব নৌপথে লঞ্চ ও জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর সব কার্যক্রম। সাগরে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ রোববারও সারা দেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে। আগামীকাল সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।