ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় তৃতীয় রাষ্ট্রের ইন্ধন রয়েছে : ডা. জাফরুল্লাহ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘হেফাজতের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তবে তাদের মিটিং-মিছিল করাটাকে সমর্থন করি। এটা তাদের মৌলিক অধিকার।’ এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এতে ‘তৃতীয় রাষ্ট্রের’ ইন্ধন রয়েছে।
আজ রোববার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেজর হায়দার মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেন। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি, হরতাল চলাকালে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত হত্যা, বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ডা. জাফরুল্লাহ নেতৃত্বাধীন ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
গত ৩ এপ্রিল পরদর্শনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেই পরিদর্শনের বিবরণ তুলে ধরার জন্যই আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বেশকিছু প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনার স্থান পরিদর্শন করি। সেখানে স্থানীয় জনগণ, আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ সদস্য ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনেছি। দেখে-শুনে এটিই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই হামলার সঙ্গে তৃতীয় রাষ্ট্রের ইন্ধন রয়েছে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশনে আগুনের ঘটনা সাত দিন আগে ঘটলেও ৩ এপ্রিল আমরা সেখানে গিয়ে দেখেছি আগুন জ্বলছে। এটা কেন? এটা কাকে দেখাতে চান? তাহলে কি হেফাজতে ইসলাম, নাকি জনগণ, নাকি অন্য কোনো তৃতীয় রাষ্ট্র এখানে জড়িত?’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতি এখন আমলা ও ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের করতে দেন। সেখানকার সংসদ সদস্য একজন আমলা, তাঁর কোনো রাজনৈতিক কর্মী নেই। রয়েছে পুলিশ ও হেলমেট বাহিনী।’
গণফোরামের নেতা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘মানুষ এখনও কথা বলতে পারে না। অজ্ঞাতনামা দিয়ে মানুষকে আটকানো সুযোগ হয়েছে। সবাইকে এই ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি শিশুর শরীর গুলিবিদ্ধ অথচ চিকিৎসা নিতে যেতে পারছে না। এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী সবার পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
১. নিহত ও আহতদের তালিকা প্রকাশ করে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. বায়তুল মোকাররম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত পুরো ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে হবে। তদন্ত কমিটিতে নাগরিকদের বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
৩. একই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা হিসেবে ২০ হাজারের অধিক মানুষের নামে যে মামলা দেওয়া হয়েছে সেসব মামলার নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, নারীর জন্য সুশাসনের নির্বাহী পরিচালক রুবী আমানউল্লাহ, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান প্রমুখ।