ভৈরবে ক্যানসার সচেতনতায় সাইকেল র্যালি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ক্যানসার প্রতিরোধ সচেতনতায় আলোচনা সভা, সাইকেল র্যালি ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। হিমু পরিবহন নামের একটি সামাজিক সংগঠন ওইসব কর্মসূচির আয়োজন করে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সংগঠনের অর্ধশত সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেয়।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ভৈরব পৌরসভার মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। মরণব্যাধি ক্যানসার প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোগটির প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধে সচেতনতা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।’ এ সময় তিনি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণসহ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য ও পানাহার থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ক্যানসারে আক্রান্ত একজন রোগী নিজে যে শুধু মৃত্যুর দিকে ধাবিতসহ দুর্ভোগে পড়েন তাই নয়, গোটা পরিবারকে আর্থিক ও মানসিক চাপে ফেলেন। তাই ক্যানসার হওয়ার পর নিরাময়ের চেয়ে হওয়ার আগে প্রতিরোধে সচেতন হওয়া উচিত। এমন বক্তব্য তুলে ধরে ক্যানসার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া ভৈরব উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বদন তৈয়বা বলেন, ‘সময় মতো রোগ নির্ণয়, চিকিৎসাব্যয় বহনসহ পারিবারিকভাবে সমর্থন পাওয়া সবার ভাগ্যে জোটে না। তাই এই রোগটি হলে এসবের অভাবে মানুষ মৃত্যুর আগেই মরে যায়।’ তাই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিরোধে সচেতন হওয়া ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ভৈরব বাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে আয়োজিত আলোচনা সভায় সংগঠনের সমন্বয়ক জায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যানসার থেকে দূরে থাকতে হলে ধূমপানকে একদমই না বলতে হবে। সিগারেটের ধোঁয়ার চার হাজার কেমিক্যালের মাঝে অন্তত ৪৩৮টি উপাদান পাওয়া গেছে, যা ক্যানসারের জন্য দায়ী। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যানসার, স্বরনালির ক্যানসার, গলনালির ক্যানসারসহ প্রত্যেক অঙ্গে ক্যানসার হতে পারে। বিশ্বের মোট ক্যানসারে মৃত্যুর ২০ ভাগ তামাক সেবনের কারণে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যুর ৭০ ভাগই হচ্ছে এই তামাক সেবনের ফলে।’
নাট্যকার ও অভিনেতা সাগর রহমান বলেন, ‘ক্যানসার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় টিকা যেমন জরায়ুর ক্যানসার ও হেপাটাইটিস বি ইত্যাদি গ্রহণসহ শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো, সব ধরনের অ্যালকোহল বর্জন, নিরাপদ মেলামেশা মেনে চলা, জর্দা-বিড়ি একদম না খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’
নির্মাতা নাঈম হক বলেন, ‘ক্যানসার রোগটি সম্পর্কে কম-বেশি আমরা সবাই পরিচিত। হয়তো আমাদের কারো প্রিয়জন, প্রিয়মুখ এরই মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেঁড়ে চলে গেছেন। অথবা কেউ যন্ত্রণা ধারণ করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই রোগটি কিন্তু এখন আর চিকিৎসার বাইরে নয়। সচেতনতা ও দ্রুত রোগ নিরূপণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই এই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে আমাদের জেনে নিতে হবে, প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে।’
পৌর কাউন্সিলর হাবিবুল্লাহ নিয়াজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘পৃথিবীতে যত লোক ক্যানসারে মারা যায়, তা এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে যদি আমরা সচেতন হই।’
পরে ‘হলে সবাই সচেতন, ক্যানসার রুখতে কতক্ষণ’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সেখান থেকে শুরু হওয়া সাইকেল র্যালিটি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে। অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজারে ক্যানসার সচেতনতায় তৈরি লিফলেট বিতরণ করে।