ভোট স্থগিতের দাবি বিএনপির
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসনে উপ-নির্বাচন আপাতত স্থগিতের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে দেশের আদালতের বিচারকাজ ‘যতদিন প্রয়োজন’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে দলটি।
করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।
বিএনপির মহাসচিব এমন একটি সময়ে এই দাবি জানালেন, যখন নির্বাচন কমিশন আগামী শনিবারের জাতীয় সংসদের ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচন করার ব্যাপারে নিজেদের অনঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে।
তবে ২৯ মার্চের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং এবং বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপ-নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি।
আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'এই নির্বাচন বন্ধ করলে সুবিধা কী এবং না করলে কী সুবিধা- এসব বিবেচনা করে সব মিলিয়ে ২১ মার্চ নির্বাচন হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ভাইরাসের কারণে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দিতে সেখানে হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ অন্যান্য সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।’
তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ইসির এই ধরনের সিদ্ধান্তকে ‘একপেশে’ বলে উল্লেখ করেন।
‘করোনাভাইরাসের আতংকের কারণে জনগণের কাছ থেকে, বিভিন্ন জায়গা থেকে এরমধ্যে নির্বাচন বন্ধ করার কথা এসেছে। কিছুক্ষণ আগে নির্বাচন কমিশন বলছে যে, ২১ তারিখে (শনিবার) যে নির্বাচনগুলো আছে তা হবেই এবং ২৯ তারিখের নির্বাচনের ব্যাপারে ২১ তারিখ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটাকে একেবারেই একটা একপেশে সিদ্ধান্ত মনে করি এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বিবর্জিত, জনগণের যে আশা-প্রত্যাশা, এই দুর্যোগের সময়ে কমিশন মানবিক আচরণ করবে- তারা সেটা করছেন না বরং অমানবিক আচরণ করছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, কমিশন তাদের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে তারা জনগণের স্বার্থে, মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে এই নির্বাচনগুলোকে আপাতত স্থগিত রাখবেন। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে। এমনিতে ভোটারের পারসেন্টেজ যেটা গত নির্বাচনে দেখেছি ৮-৯ ভাগের বেশি আসবে না। সেই ক্ষেত্রে এই করোনাভাইরাসের কারণে ভোটাররা কত পারসেন্ট আসবে, ভোটের টার্নআউট কী হবে সেটা আমরা সবাই অনুমান করতে পারি।’
‘আদালতও বন্ধ হোক’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের আদালতগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভীড় হয়। আসামিদের তাদের আসতে হয়, হাজিরা দিতে হয়। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেখানে উপস্থিত হন প্রায় প্রত্যেকটি আদালতগুলোতে। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি, অন্যান্যগুলোতে তাই এবং সংখ্যা হাজারের কম হবে না, প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সেখানে যায়। আমি যে রিপোর্টটা পেয়েছি যে, ৩০ জন বিচারক এরমধ্যে কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। ৩০ জন বিচারক যদি কোয়ারেন্টিনে যান, সেক্ষেত্রে এটা পরিস্কার আদালতগুলো এই ভাইরাসের সংক্রমণটা বেশি হচ্ছে। আমরা সেই কারণে আহ্বান জানাচ্ছি যে, এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে, তাদের জীবনের কথা চিন্তা করে আদালতগুলো আপাতত কিছুদিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। আদালতের কার্য্ক্রম স্থগিত রাখা যতদিন প্রয়োজন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রথম থেকেই সরকার এই করোনাভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। আমরা প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, এখানে দায়িত্বহীনতা পরিচয় দিচ্ছে সরকার। আমরা বলেছিলাম, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করুন। তারা বন্ধ করেনি। পরে ১৬ তারিখে তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী বলেছেন যে, প্রয়োজন হলে সব শাটডাউন করা হবে, যা যা দরকার সব বন্ধ করা হবে। এখন তো শাটডা্উন করার জায়গাটা অলরেডি তো এসে গেছে। কারণ শাটডাউন না করলে যেভাবে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে তা ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ এমনিতেই একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে এই ধরনের একটা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, এখন এটা বাইরের থেকে আসার দরকার হবে না, এটা দেশের অভ্যন্তরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের দ্বারা সব জায়গায় ছড়াবে।’
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ভা্ইরাসের সংক্রামকদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ, সংক্রামক শনাক্তকরণসহ চিকিৎসক-নার্সদের প্রয়োজনীয় পোশাক (পিপিই) ও যন্ত্রপাতি কোনো কিছু সরকার ব্যবস্থা করতে পারেনি।’