মধ্যরাতে উঠবে নিষেধাজ্ঞা, ইলিশ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা
কখন নামবেন নদীতে, কখন যে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটবেন—এভাবেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন চাঁদপুরের সরকার নিবন্ধিত ৪৪ হাজারের বেশি জেলে।
জেলে পাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ দুই মাস নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার দিন পেরোনোর অপেক্ষায় রয়েছেন জেলেরা। গুছিয়ে নিচ্ছেন তাঁদের সরঞ্জাম। কাঙ্ক্ষিত সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। তারপরই নেমে পড়বেন জলে।
২০০৬ সাল থেকে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের বিস্তীর্ণ নদী সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সে অভয়াশ্রমের নির্দিষ্ট সময়সীমা আজ দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হবে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা নির্বিঘ্নে নদীতে মাছ শিকার করতে পারেননি। তাই, অভয়াশ্রম সীমা শেষে মাছ ধরার আনন্দে জেলে পল্লীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিন সদর উপজেলার আনন্দ বাজার, রাজরাজেশ্বর, হরিণা, বহরিয়া ও পুরানবাজারের রণাগোয়াল এলাকার জেলে পাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে জেলেরা এখন মহাব্যস্ত। এরই মধ্যে নৌকা মেরামত, জাল ঠিক করা, নৌকার দাঁড় তৈরি করা, রাত জেগে নদীতে থাকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তাঁরা। এমনকি, অনেকে দাদন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন। জেলেদের দেখলে মনে হয়, যেন এখন দম ফেলার সময় নেই। দুমাস মাছ ধরতে না পারায় এ পরিবারগুলো যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল।
আলাপকালে আনন্দ বাজার এলাকার জেলে হাবিব, খোরশেদ ও লিটন বলেন, ‘অনেক দিন বউ-পোলাপাইনেরে ভালা কিছু খাওয়াইতে পারি নাই। অভাবে অভাবেই কাটছে দিন। তয় এখন যহন মাছ ধরার সুযোগ হইছে, আর টেনশন নাই।’
তবে, অভয়াশ্রম মৌসুমে সরকারি সহায়তা প্রসঙ্গে রাজরাজেশ্বর ও রণাগোয়ালের একাধিক জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যে চাল দিছে, তা দিয়ে তো আর সংসার চলে না। পোলাপাইনের মুখে ভাত তুইলা দিতে হইলে আরও কিছু দরকার। হেগুলো কিনতে হলেও টাহার দরকার। তয় টাহা পামু কই, সরকার তো আর টাহা দেয় না। অনেক জাউল্লা এসব কারণেও নদীতে নামে।
তাই বিজিএফ’র চাল নয়, বিকল্প সহায়তা কিংবা নির্দিষ্ট কর্মসংস্থান চান জেলেরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অভয়াশ্রম কর্মসূচি বেশি সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি বলেন, ‘এবার সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। তাই কতিপয় অসাধু জেলে নদীতে নামতে পারেনি। পাশাপাশি নদীতে ড্রেজিং বন্ধ থাকায় ইলিশ অবাধে বিচরণের সুযোগ পেয়েছে। তাই আশা করছি, ইনশাআল্লাহ এ বছর ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টনের অধিক। আগামী সময়েও উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।