ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশে জেলেদের হাসি, মলিন মনে ক্রেতারা
দ্বীপজেলা ভোলা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী বেষ্টিত। সাগর মোহনার এই জেলাটিতে কয়েক লাখ জেলে ইলিশ শিকারের ওপর নির্ভর করে। মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন তারা। তবে, দীর্ঘ দিনের সেই হতাশা কাটিয়ে এবার হাসি ফুটতে শুরু করেছে তাদের চেহারায়। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে তাদের জালে। যদিও দামে প্রভাব পড়েনি। এখনও বেশ চড়া ইলিশের দাম। এতে ক্রেতাদের মনে নেই উজ্জ্বল হাসি।
জেলার সর্বদক্ষিণে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সামরাজ মাছঘাট। সেখানের জেলেদের প্রাণজুড়ানো হাসিই বলে দিচ্ছে সব। মাছ ধরার সময়ের শেষ দিকে হলেও খুশি তারা। যদিও মেঘনা নয়, ইলিশ পাচ্ছেন সাগরের জেলেরা।
চরফ্যাশনের সামরাজ মাছঘাটে ইলিশ বিক্রির হাঁকডাকের ফলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মাছ বিক্রির হাঁকডাক। ট্রলার থেকে ইলিশ নামিয়ে বিক্রি হয় এই মাছঘাটে।
তবে আকারে ছোট ইলিশ পাওয়ার কথা তুলে ধরে জেলেরা জানান, অন্তত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে না দিয়ে শেষের দিকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তখন ডিম আসত ইলিশের পেটে। পাশাপাশি দামেও অনেকটা সস্তা হতো।
জেলে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে জালে। তবে, আকারে ছোট। যে কারণে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। একটি ট্রলারের মাঝিমাল্লারা অন্তত ৩৫ মণ ইলিশ পেয়েছে। তাতে বেশ খুশি। দৌলতখানের অপর একটি ট্রলারের ৮৬ মণ ইলিশ পেয়ে সরাসরি চাঁদপুর নিয়ে গেছে। সেখানে বিক্রি করেছে ৩৯ লাখ টাকা।’
এভাবে কমবেশি প্রতিটি ট্রলার ইলিশ পাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন সামরাজ মাছঘাটের আড়ত মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. সেলিম। তার মতে আগের চেয়ে এখন বেশ ভালোই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তবে মাছের পেটে ডিম এখনও আসেনি। সে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাটা আরও কিছুদিন পিছিয়ে দিলে ভাল হতো।
মা ইলিশ রক্ষায় দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে আড়তদার মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। কেউ পাচ্ছে ৩৫ মণ আবার কেউ পাচ্ছে ৮০ থেকে শত মণ ইলিশ। এসব ইলিশ আকারে খুবই ছোট। পেটে ডিম নেই কোনো ইলিশের। বেশির ভাগ ইলিশেরই এই অবস্থা।’ ভারতের সাথে মিল রেখে মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। কারণ বাংলাদেশে বন্ধ থাকলেও ভারতের জেলেরা ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
উল্লেখ্য আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম। এই ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মেঘনায় ইলিশ কম ধরা পড়ছে।’ তবে, সাগরে ইলিশ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘সরকারিভাবে এক লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সফল হবে।’