মালিকদের খুশি করতে বেপরোয়া গাড়ি চালায় চালকরা
গণপরিবহনের মালিকরা চালকদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার টার্গেট দেয়। যেটা চালকদের জন্য অনেকসময় কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে মালিকদের খুশি করতে তাঁরা বেপরোয়া গাড়ি চালায়। এ সমস্যা সমাধানে মালিকদের সচেতন হতে হবে বলে আদালতের রায়ের সময় মন্তব্য করেন বিচারক।
আজ রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এ মামলাটি পেনালকোডের (দণ্ডবিধির) ৩০৪ ধারায় দায়ের করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখানে এর চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। আপনারা সংবাদমাধ্যমগুলো এমনভাবে প্রচার করবেন যাতে ছাত্রসমাজ ও জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি না থাকে।’
বিচারক আরও বলেন, ‘পরিবহন সেক্টরে অনেক খামখেয়ালিপনা দেখা যায়। বাসের বেপরোয়া চলাচলের কারণে চাকার নিচে পিষ্ট হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরাও। এ ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশকে সচেতন হতে হবে।’
এদিকে আজ বিকাল তিনটায় রাজধানীর বিমানবন্দরে সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসের দুই চালকসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক মাসুম বিল্লাহ, মো. জোবায়ের সুমন ও চালকের সহকারী মো. আসাদ কাজী। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে ছয় মাস অতিরিক্ত কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বাস চালকের সহকারী মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত।
আসামিদের মধ্যে আসাদ কাজী পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মো. শাহদাত হোসেন আকন্দের মামলার অংশের কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ছয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে চালক ও তাদের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। এ সময় চালক মাসুম বিল্লাহ সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়।
নিহতরা হলো- ওই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। সেদিন বাস দুটি দুই থেকে তিনবার একে অপরকে ওভারটেক করে। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
এরপর মিরপুর ও বরগুনা জেলায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের তিন বাসের তিন চালক এবং তাদের দুই সহযোগী এনায়েত ও রিপনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এই দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ‘সবার জন্যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে’ রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। ‘আমরা সুবিচার চাই’ স্লোগান সংবলিত ব্যানার নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এর পরেই দেশে ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন সড়ক পরিবহন আইন এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।