মা-বাবার কবরের পাশেই শায়িত হলেন সাংসদ ইসরাফিল
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/07/27/acmiils0.jpg)
মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম।
আজ সোমবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে তাঁর মরদেহ এসে নওগাঁয় পৌঁছে। সেখান থেকে লাশবাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝিনাতে। সেখানে বাদ আসর ও বাদ মাগরিব স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে তিন দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাত ৮টার দিকে মা এসেদা রহমান ও বাবা আজিজুর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।
জানাজায় নওগাঁ-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন, সাবেক সংসদ সদস্য ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল মালেক, জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান মিয়া, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বাদল, রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল, আত্রাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এবাদুর রহমান প্রামাণিক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
বেশকিছু দিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন ইসরাফিল আলম। এর মধ্যে ৩৫ দিন আগে তাঁর মা এসেদা রহমান মারা যাওয়ায় তিনি আরো ভেঙে পড়েন। পরে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় গত ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে ১৪ জুলাই তাঁকে বাসায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৫ জুলাই করোনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। বাসায় আনার পর ১৭ জুলাই তাঁর কাশির সঙ্গে রক্ত আসে। ওই দিনই তাঁকে আবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ জুলাই রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৪ জুলাই তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর আজ সোমবার সকালে তিনি মারা যান।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ইসরাফিল আলম ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আরো দুইবারসহ মোট তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া, ইসরাফিল আলম নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সর্বহারারা প্রকাশ্যে মানুষকে গলা কেটে করে রাখত। এরপর জঙ্গি সংগঠন জেএমবির তাণ্ডব। অশান্তি আর হাহাকারের বাতাস বইতে শুরু করে এই অঞ্চলে। ঠিক তখনই আর্বিভাব ঘটে শ্রমিকনেতা ইসরাফিল আলমের। আওয়ামী লীগের মনোয়নয়ন নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে সামান্য ভোটে তিনি পরাজিত হন। তিনি হাল ছাড়েননি। ওই সময়ে এলাকায় সর্বহারা ও জেএমবির তাণ্ডব আরো বেড়ে যায়। তিনি এমপি না হলেও সার্বক্ষণিক এলাকার মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে কৌশলে সর্বহারা ও বাংলা ভাইকে মোকাবিলা করেছেন। আর এ কারণে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৮ সালে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হন শ্রমিকনেতা মো. ইসরাফিল আলম।
ইসরাফিল আলম নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে ১৯৬৬ সালে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম আজিজুর রহমান ছিলেন এলাকার কৃষক আন্দোলনের নেতা। ইসরাফিল আলম তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করার সময় শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরপর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।