মৃতদেহ আটকে চাঁদা দাবি করায় গ্রেপ্তার ৭
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ক্লিনিকপাড়া হিসেবে পরিচিত নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে লাশ বহনকারী গাড়ির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কেউ মারা গেলে সিন্ডিকেটের গাড়িতে করে লাশ বহন করতে বাধ্য করা হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।
নগরীর অন্য কোথাও থেকে কম ভাড়ায় লাশ পরিবহনের গাড়ি আনলে কিংবা নিজস্ব গাড়িতে লাশ বহন করতে গেলে ওই সিন্ডিকেটকে দিতে হয় নির্ধারিত চাঁদা। চাঁদা দিতে কেউ রাজি না হলে মৃতদেহ আটকে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। মৃত শোকে বিহ্বল স্বজনরা ঝামেলা এড়াতে কোথাও অভিযোগ না করে সিন্ডিকেটের দাবি মেনে নিয়ে মৃতদেহ নিয়ে চলে যায় বাড়ি। এত দিন এভাবে চললেও এবার ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে মেহেরেপুরের মৃত এক ব্যক্তির স্বজনরা। মৃতদেহ আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আব্দুল্লাহ (৩২), রাজন (৩৫), বাদশা (৪০), এমদাদুল হক (৪০), বিপ্লব (৫০), জাহিদ হাসান (২৬) ও জানারুল ইসলাম (২৮)। রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস আজ সোমবার এ তথ্য দিয়ে জানান, গতকাল রোববার বিকেলে নগরীর লক্ষ্মীপুরে একটি বেরসকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেহেরপুরের জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি মারা যান। স্বজনরা তাদের নিজস্ব গাড়িতে করে মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় আব্দুল্লাহ ও রাজন নামের দুজন এসে তাদের পথ আটকান। তারা মৃতদেহ আটকে চাঁদা দাবি করে জানান, এখান থেকে কোনো লাশ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে হলে তাদের গাড়িতে করেই নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে তাদের লাশ বহনকারী মাইক্রোবাস সমিতিকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তির স্বজনরা আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সেখানে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আব্দুল্লাহ ও রাজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির স্বজনরাও পরে লাশ নিয়ে বাড়ি গেছেন।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, গ্রেপ্তারকৃত সাত ব্যক্তি মৃতদেহ বহনকারী মাইক্রোবাস সিন্ডিকেট দলের সদস্য। তারা মৃত ব্যক্তির স্বজনদের জিম্মি করে বেশি ভাড়ায় লাশ বহনকারী গাড়ি ভাড়া নিতে বাধ্য করে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের অন্য সদস্যদেরও চিহ্নিত করা হবে।