মেয়রের বিরুদ্ধে নারী কাউন্সিলরের ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ!
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম লিপনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন একই পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার। আজ বুধবার বিকেলে তিনি তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়র বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের নেশায় আসক্ত। গত ৩ আগস্ট আমি পৌরসভায় গেলে মেয়র তার পার্সোনাল রুমে আমাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন। আমি কৌশলে আমার ইজ্জত রক্ষা করে বের হয়ে এসেছি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব কাউন্সিলর নিয়ে বৈঠক পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও ২২ আগস্ট ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির কাজীকে দিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন মেয়র। বিভিন্ন সময় দেওয়া ওনার কুপ্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ায় উনি আমাকে পৌরসভার কোনো সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন না এবং আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমনকি আমি পৌরসভার মাসিক তিনটির মধ্যে দুটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলেও তিনি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেননি।’
নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার আরও বলেন, ‘গত ৩১ অক্টোবর আমি মাসিক মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে দেননি। আমি যে মিটিংয়ে উপস্থিত হয়েছি, তা পৌরসভার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই প্রমাণ মিলবে। এমনকি ওনার আস্থাভাজন বিভিন্ন কাউন্সিলর দিয়ে আমাকেও হুমকি দিয়ে আসছেন। আমি যদি ওনার কথা মতো না চলি, তাহলে আমাকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করবেন। উনি যে আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে ইজ্জতহানির চেষ্টা করেছেন, আমার সহকারী কাউন্সিলর ভাই ও বোনরা সব কিছু জানতেন। এই নিয়ে আমার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। আজ তারা এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলছেন না। আজ তারা ক্ষণিকের লোভ লালসায় পৌরসভার মাধ্যমে অসাধু উপায়ে মেয়রের ছত্রছায়ায় বিভিন্নভাবে টাকা রোজগার বা উপার্জন করছেন এবং উনার ক্ষমতার কারণে আমার সত্য কথাটাকেও তারা মিথ্যা বলে প্রচার করছেন। আমাকে খারাপ বলে অপবাদ দিচ্ছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমাকে এই নেশাখোর মদখোর, মেয়রের হাত থেকে রক্ষা করুন। আপনাদের কাছে আমি নিরাপত্তা চাই। আপনারা সঠিকভাবে তদন্ত করলে সব কিছু বেরিয়ে আসবে।’
নারী কাউন্সিলর বলেন, ‘সবদিক থেকে যখন আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তখন আমি নিরুপায় হয়ে গত ৩১ অক্টোবর আমার নিজ নামীয় ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে সব কিছু পৌরসভা বাসিন্দাদের সামনে তুলে ধরি। এরপর গত ১ নভেম্বর রাতে মেয়রের কিছু লোক এসে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যান। গতকাল ২ অক্টোবর মেয়র তার সঙ্গীদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিনু আক্তার বলেন, কাউন্সিলররা আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন—আমি যাতে আর বাড়াবাড়ি না করি। কিন্তু মেয়র ক্ষমা চাননি। আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি কোর্টে অনেকবার গিয়েছি কিন্তু কোনো আইনজীবী আমাকে সহযোগিতা করেননি। আমি হাজীগঞ্জ থানায় গিয়েছি, সেখানকার দারোগা নাজিম আমাকে বলেছেন, আপনার মামলা থানায় নেবে না।’
তিনি এই ঘটনার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের স্বামী নূরে আলম, বাবা আনোয়ার হোসেন, মা ও তিন মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহাবুব আলম লিপনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট। মূলত ওই কাউন্সিলরের পারিবারিক বিষয়ে তার বাড়িরই ৭ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনির হোসেন কাজী ও ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন কাজীকে তদন্তের দায়িত্ব দেই অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য। কিন্তু পরপর তিনটি নোটিশের পরও তার ও তার পরিবারের অসহযোগিতার কারণে সুরাহা করা যায়নি। অভিযোগের এই বিষয়টি যখন আমার অফিস সহকারী ড্রাফটিং করছিলেন তখন ওই নারী কাউন্সিলর গিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন। এসব ঘটনার জের ধরে তিনি এসব মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনি রটিয়েছেন। এই ঘটনায় কাউন্সিলর মনির কাজী বাদী হয়ে মহিলা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গত ১ নভেম্বর হাজীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন এবং ২ নভেম্বর আদালতে মানহানির মামলা করেছেন।