মোংলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে চিংড়িঘের
বাগেরহাটের মোংলায় বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারে পানি বেড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার চিংড়িঘের। এতে ভেসে গেছে বাগদা চিংড়িসহ অন্যান্য মাছও। এখানকার প্রায় এক হাজার ৭৬৫টি চিংড়িঘের তলিয়ে চাষিদের প্রায় ছয় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান।
মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সব ঘেরেই কম-বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে চাঁদপাই ও চিলা ইউনিয়নের ঘেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে মোংলার পশুর ও মোংলা নদীর পাশ ঘেঁষে যেসব ঘের রয়েছে সেগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এরপর ক্ষতি হয়েছে সোনাইলতলা, বুড়িরডাঙ্গা, মিঠাখালী ও সুন্দরবন ইউনিয়নে। চাঁদপাই, চিলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এসব ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।’
চাঁদপাই ইউনিয়নের কাইনমারী গ্রামের ঘের মালিক নিখিল হালদার বলেন, ‘বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘের তলিয়ে সব মাছ বের হয়ে গেছে। এখন খালি ঘেরই পাহারা দিচ্ছি। এখন ভেঙে যাওয়া ঘেরের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করছি।’
কাইনমারী গ্রামের চিংড়িচাষি বিনয় বিশ্বাস বলেন, ‘পানি বাড়তে থাকায় যাতে মাছ বের হয়ে না যায় সেজন্য ঘেরের চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ নদীর জোয়ারের পানির চাপে ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে জালসহ সব মাছ ভেসে গেছে। আমার দুটি ঘেরের একটি মাছও নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করে একটি মাছও পাইনি। তাই জাল বালতি নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছি।’
একই গ্রামের প্রলয় মণ্ডল বলেন, ‘বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমার বাড়ির পাশের ঘের এবং ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। কিছু দিন আগে আম্পানে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আবারও সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।’
কানাইনগর গ্রামের বাসিন্দা মজিদ শেখ বলেন, ‘বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ার পর মাটি দিয়ে ঘেরের বেড়ি উঁচু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে মাছ যা ছিল তা সব বের হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারিনি। কীভাবে সামনের দিনগুলো চলব। ছেলেমেয়েদের কী দিয়ে লেখাপড়া শেখাব, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
এদিকে, বৃষ্টি ও নদীর জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার। তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। আশা করছি আগামী দু-একদিনের মধ্যে বরাদ্দ পেলে ক্ষুদ্র চাষিসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বিশেষ করে খাদ্য (চাল) সহায়তা দেওয়া হবে।’
ইউএনও আরো বলেন, ‘বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা হাতে পেলে বরাদ্দের চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।’