যতবার বিদেশে গেছি, লক্ষ্য ছিল নিজেদের বিমানে যাব : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি যতবার দেশের বাইরে গেছি, সবসময় আমার একটা লক্ষ্য ছিল যে, আমাদের নিজেদের বিমান ব্যবহার করব।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আজ বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী মার্চ মাস থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেমকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে অনলাইনে টিকেটিং, রিজারভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর চেক-ইন—সবকিছু অনলাইনে হবে। এটা আমাদের প্রবাসীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯-এ আমরা লক্ষ করি—বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা ও ইয়াঙ্গুন রুটে যে ফ্লাইট চলাচল করত, সেগুলো সব লোকসান দেয় এবং একে একে সব বন্ধই করে দিতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই যে জরাজীর্ণ একটা বিমান, এমনকি একটা গানও শোনা যেত না, যদি আমি জানলার সিটে বসতাম—তখন তো ঝরঝর করে পানি পড়ত। কোনোমতে কাপড় দিয়ে সে পানি বন্ধ করা হতো। এমনই আমাদের বিমানের দুর্দশা ছিল। বরং আমি আমাদের পাইলটদের সবসময় ধন্যবাদ জানাতাম যে—এ ধরনের অবস্থায় সাহস করে, তাঁরা যে বিমান চালাচ্ছেন, এটাই একটা বড় জিনিস ছিল।’
‘আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে চারটি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ৪টি ৭৮৭-৮, দুটি ৭৮৭-৯-সহ মোট ছয়টি ড্রিমলাইনার, ছয়টি ৭৩৭-৮০০ এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। এ ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৮টি উড়োজাহাজই বিমানের নিজস্ব মালিকানাধীন। অনেকগুলো আমাদের সময়েই সংগ্রহ বা ক্রয় করা’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথম বারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দিয়ে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এতে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। বাংলাদেশে গমনাগমনকারী সব এয়ারলাইন্সকে বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দিয়ে থাকে। বিমানের একটি দক্ষ এবং অত্যন্ত কার্যকর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। চতুর্থ প্রজন্মের বিমান সংযুক্ত হওয়ায় যাত্রীদের আকাশে ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ইন-ফ্লাইট বিনোদন সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান বন্দরগুলো পার্শ্ববর্তী শহরের যাত্রীদের আরামদায়ক গমনাগমনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনোরম কোচ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। করোনার সময়েও কিন্তু এর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। কাজ অব্যাহত রয়েছে। উচ্চশক্তি সম্পন্ন রাডার আমরা স্থাপন করব, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। যেটা আমাদের বিমান চলাচলে... শুধু আমাদের বিমান নয়, আমাদের আকাশসীমা দিয়ে অন্য যত দেশের বিমান (ফ্লাইট) যাবে, সবার জন্যই সেটা আমরা করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আমরা সম্প্রসারণ করে আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ, আমাদের এ বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে পড়ে। যেজন্য এ জায়গায় আমাদের অনেক, অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানো দরকার।’