যেভাবে কৃষক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের কাউন্সিল অধিবেশন চলছে। বাইরে নেতাকর্মীদের ভিড়, স্লোগানে মুখর ইনস্টিটিউশনের প্রবেশদ্বার। সারা দেশ থেকে আসা কৃষক লীগের কাউন্সিলররা সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করতে থাকেন। সেই নাম গ্রহণ করেন অধিবেশনের পরিচালক ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ বুধবার বিকেল ৩টার পর শুরু হওয়া কৃষক লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শুধু কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে ছিলেন প্রার্থীদের সমর্থকরা। একেকজন কাউন্সিলর একেক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে থাকেন আর তাদের সমর্থকরা উল্লাস করতে থাকেন। দিতে থাকেন নানা স্লোগান। তবে স্লোগান দিতে বারবার নিষেধ করছিলেন মঞ্চে থাকা নেতারা।
সমর্থক ও নেতাকর্মীদের স্লোগান দেওয়া দেখে ওবায়দুল কাদের তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্লোগান দিবেন না। মনে রাখবেন, স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া যায় না।’ তবু মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সে সময় স্লোগান বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘প্রার্থীর নামে স্লোগান দিলেই নাম কাটা যাবে। স্লোগান দিলে দিবেন শুধু দলীয় সভাপতির নামে।’
এভাবে কাউন্সিলরা কৃষক লীগের সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব শেষ করেন। তখন ওবায়দুল কাদের প্রথমে নয়জন সভাপতি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। যদিও একে একে আরো চারজন প্রার্থীর নাম বাড়ান তিনি। এ ছাড়া ১১ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন তিনি। সে সময় মিলনায়তন ভর্তি লোকজন করতালি দিয়ে তা স্বাগত জানান।
ওবায়দুল কাদের প্রথমে সভাপতি ১৩ প্রার্থীকে মঞ্চের ডান পাশে উপস্থিত হতে বলেন। সে সময় তিনি প্রার্থীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘২০ মিনিটের ভেতরে আপনারা ১৩ জন মিলে একজন হবেন। সেজন্য আলোচনা করুন।’
একটু পরে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদের ১১ প্রার্থীকে মঞ্চের বাঁ পাশে উপস্থিত হতে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘২০ মিনিটের ভেতরে আপনারাও ১১ জন মিলে একজন হবেন।’
ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত আলোচনা করেন। কিন্তু তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। এরপর ৫টা ১৫ মিনিটে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সব প্রার্থী ২০ মিনিট নিজেদের ভেতরে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো প্রার্থীই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হননি। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করছি।’
তবে নাম ঘোষণা করার সময় ওবায়দুল কাদের উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চান, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হওয়া কমিটির নাম আপনারা মেনে নেবেন তো?’ সে সময় নেতাকর্মীরা হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। তারপর তিনি বলেন, ‘আসলে অনেকদিন কৃষক লীগের কমিটি হয়নি (আট বছর) তো সেজন্য এত বেশি প্রার্থী। মাঝখানে যদি আর একটা সম্মেলন হতো তাহলে এত প্রার্থী হতো না।’
এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কৃষক লীগের নতুন সভাপতি হিসেবে কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতির নাম ঘোষণা করেন। এরপর নতুন কমিটির উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘বিদায়ী কমিটি এবং আপনারা বসে আগামী সাত দিনের ভেতরে একটি খসড়া কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটির নাম আমার কাছে অথবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিতে পারেন।’