রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে : আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যেন কোনো কারণে পণ্যের মূল্য না বাড়ে। পণ্যের কালোবাজারি রোধ এবং খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে।'
আজ বুধবার আসন্ন রমজান উপলক্ষে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব নির্দেশনা দেন আইজিপি। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে পালিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সীমিত রয়েছে। রমজানে ধর্মাচার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে।'
আইজিপি বলেন, ‘পণ্যের পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে অনেক জেলায় ত্রাণ নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে। আসার সময় ওই ট্রাকগুলো খালি ফিরে আসছে। ওই খালি ট্রাকগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।' তিনি বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। রিলিফ ও টিসিবি পণ্য এবং ভিজিএফ ও ওএমএস সুবিধা যেন জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে হবে।'
হাওরে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘হাওরে হয়তো আরো শ্রমিক পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার জন্য শ্রমিকবাহী গাড়ির সামনে ব্যানার এবং গাড়িতে শ্রমিকদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর রাখতে হবে।'
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অথবা ইফতার বিতরণের নামে জনসমাগম না করেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, ত্রাণ বিতরণে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রমজানে যেন কোনোভাবেই ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।'
আইজিপি বলেন, কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে অনেকের লকডাউন ভাঙ্গার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করতে হবে।'
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের অন্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া, দেশের পাঁচটি বিভাগে চিকিৎসার আয়োজন করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় যে চিকিৎসা দেওয়া হবে, একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেওয়া হবে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
আইজিপি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এরইমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।'
আইজিপি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রান্তিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বাড়তে পারে। এ ধরনের অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'
পুলিশপ্রধান আরো বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেক ভালো কাজ করছে, পুলিশের অনেক অর্জন রয়েছে। এ অর্জন কোনভাবেই ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। কেউ যেন ধর্মীয় উসকানি, গুজব এবং করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে।' তিনি আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জঙ্গিরা যেন কোনোভাবেই কোনো তৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
আইজিপি আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হতে ভিডিও কনফারেন্সে সব রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের আসন্ন পবিত্র রমজানে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেন।