রাঙ্গাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে পাবনায় যুবলীগের বিক্ষোভ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/13/pabna_1.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কটূক্তি ও শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ বলায় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে পাবনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে যুবলীগ।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। এ সময় নেতাকর্মীরা মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ‘স্বৈরাচার এরশাদের পালিত মহাসচিব’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনির সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মনির উদ্দিন মান্নান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ খান, আজমত আলী বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাকিরুল ইসলাম রনি, ফাহিমুল কবির খান শান্ত, মোস্তাফিজুর রহমান সুইট, শেখ লালু, আবদুল্লাহ মামুন বাবু, এইচ এম হিমেল প্রমুখ।
সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বিরোধী দলগুলোর হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন পরিবহন শ্রমিক নূর হোসেন। তখন তাঁর বুকে-পিঠে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক—গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেন তখন থেকেই সারা দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ‘পোস্টার’ হয়ে ওঠেন। রাজধানীর গুলিস্তানের যে স্থানটিতে তিনি নিহত হন, সেটি ‘শহীদ নূর হোসেন চত্বর’ নামেই পরিচিত।
প্রতিবছর ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদ নূর হোসেনের প্রতি এখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটি স্মরণ করে। অনেকে আলোচনা সভারও আয়োজন করে।
যদিও এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিকে ‘গণতন্ত্র দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। এবার সেই দিনটিতে এক আলোচনা সভায় মসিউর রহমান রাঙ্গা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ‘মাদকাসক্ত’ নূর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’ এ সময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সমালোচনা করেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপুল সমালোচনা শুরু হয়। গত সোমবার রাঙ্গাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবিও। রাঙ্গা বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন সেই সময়ের ছাত্রনেতারাও। যদিও কালের পরিক্রমায় নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম দল আওয়ামী লীগ এখন জাতীয় পার্টির মিত্র। দুটি দলই মহাজোটের শরিক।
গত দশম জাতীয় সংসদে সামরিক শাসক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রিসভায়ও ছিল, পাশাপাশি বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি আর সরকারে স্থান পায়নি, তাদের বিরোধী দলেই বসতে হয়েছে। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তবে সমালোচনার মুখে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘… উত্তেজনার মধ্যে বক্তব্য প্রদানকালে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমার মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে গেছে, যা নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত করেছে। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।’